ঢাকা: রাজধানীর নর্থ রোডের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের মামলায় বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। পার্থ গোপাল বণিকের পক্ষে ছিলেন ও শাহরিয়া কবির বিপ্লব।
গত ১৭ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনের ভার্চ্যুয়াল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এরপর তিনি কারামুক্ত হন। পরে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করে চ্যানেল ২৪।
ওই জামিনের বিরুদ্ধে পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। গত ২৮ জুন পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতে জামিনের পর বেসরকারি টিভি চ্যানেল ২৪ এ প্রচারিত প্রতিবেদনের স্ক্রিপ্টসহ সিডি হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১ বছর ও ৬ মাসের মধ্যে পার্থ গোপাল বণিকের মামলা নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের দু’টি আদেশের বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বিশেষ জজ আদালতকে নির্দেশ দেন।
এ আদেশ অনুসারে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ২৪-এ প্রচারিত প্রতিবেদনের স্ক্রিপ্টসহ সিডি জমা দেয়। পাশাপাশি বিশেষ জজ আদালতও ব্যাখ্যা দেন।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ডিআইজি প্রিজনস পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মোট ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
গত বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর ১৫ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পার্থ গোপালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ৮০ লাখ টাকা বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপার্জন করে অর্থপাচারের উদ্দেশে নিজ বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে তিনি ৩১ হাজার ২৫০ টাকা বেতন স্কেলে কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তার এ বেতন স্কেলের সঙ্গে এত টাকা অর্থ উপার্জন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উত্তোলন করেননি বা তিনি কখনও এ অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি। যা দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ গোপাল বণিককে। ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা তার বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়।
পরে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেফতারের দিন থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
ইএস/আরবি