ঢাকা: জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক সেই তরুণীকে হাইকোর্টে হাজির করা হয়েছে। হাজির হয়েছেন তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা-মাও।
পাশাপাশি আগামী মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১০ এপ্রিল) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বাংলাদেশি বাবা-মায়ের ওই সন্তানের জন্ম কানাডায়। ১৯ বছরের ওই তরুণী কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ডফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোর পূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
পরে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের হেফাজতে থাকা জন্মসূত্রে কানাডীয় তরুণীকে রোববার হাজির করাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সে অনুসারে আজ তরুণীকে হাজির করা হয়। উপস্থিত হন তার বাবা-মাও।
এরপর আদালত একান্তে ওই তরুণীর কথা শোনেন। তারপর তার বাবা-মায়ের কথাও শোনেন।
আদালতে মেয়েটির বাবা বলেন, আমিও কানাডিয়ান নাগরিক। আমি সব সময় কানাডিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন তারা যদি আমার মেয়েকে নিয়ে যায়, বা মেয়ে কানাডা চলে যায় এরপর তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।
এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, মেয়েটি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন যে পরিস্থিতিতে (বাবা-মার কাছে) আছে, সেখানে মেয়েটি থাকতে চাচ্ছে না। সে তার স্বাধীনতাটুকু পাচ্ছে না।
আদালত বলেন, সে (মেয়েটি) যেখানে জন্মগ্রহণ করেছে, যে পরিবেশে লেখাপড়া করেছে, সে এখন সেটি চায়। এখানে তার বন্ধু নেই। তেমন পরিবেশ নেই। এখানে সে তার মতো পরিবেশ খুঁজে পায় না। এ পরিবেশে তাকে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আদালত আরও বলেন, এখানে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সে কানাডায় ফিরে যেতে চায়। এখন আমাদের কনসার্ন হলো সে কানাডায় ফিরে যাবে এজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা বাবা-মাকে করে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যে টিউশন ফি জমা হয়েছে তা দিয়ে দিতে হবে এবং কানাডা যাওয়া পর্যন্ত এ প্রসেসে মেয়েটি তার বাবা-মায়ের কাছে থাকবে। একইসঙ্গে মেয়েটির মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে হবে। ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে দিতে হবে।
আদালত ওই তরুণীর বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক। তাকে জোর করা যাবে না, চাপাচাপি করবেন না। তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার সম্পর্কে সেতুবন্ধন করতে হবে।
এক পর্যায়ে আদালত এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবীকে আবেদন সংশোধন করে পুনরায় আবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
আদালতে বাবা-মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজিউল্লাহ ও আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
ইএস/আরবি