ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিনের সুযোগ কতটুকু?

খাদেমুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিনের সুযোগ কতটুকু?

জামিন হলো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া। অভিযুক্তকে পুলিশ বা আদালতের হেফাজত থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির থাকার শর্তে জামিনদারের জিম্মায় নির্দিষ্ট অংকের জামানত প্রদানের প্রতিশ্রুতি সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি প্রদান করা হয়।

 

জামিন বিষয়ে আদালতের ক্ষমতা সম্পর্কে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ ধারায় আলোচনা করা হয়ছে।

জামিনযোগ্য ও জামিন অযোগ্য অপরাধ: 
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ (খ) ধারায় জামিনযোগ্য অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে- এমন একটি অপরাধ যা (ফৌজদারি কার্যবিধির) দ্বিতীয় তফসিলে জামিনযোগ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে অথবা যা বর্তমানে বলবৎ কোনো আইন দ্বারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে।

জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন: 
জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনগত অধিকার। তাই জামিনযোগ্য অপরাধে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জামিন চাইলে এবং জামিনদার দিতে প্রস্তুত থাকলে তাকে জামিন দেওয়াটা আদালতের জন্য বাধ্যকর। কারণ বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারায় স্পষ্ট করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে- `জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোনো পর্যায় জামিন দিতে প্রস্তুত থাকে তাহলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে। ’

জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন: 
জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন দেওয়া আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অপরাধে অপরাধী হওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য কারণ ব্যতীত আদালত এই বিবেচনা প্রয়োগ করতে পারেন। তবে সব ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে তিনটি কারণে জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন দেওয়ার বিষয় বিবেচনার ক্ষমতা আদালতকে দেওয়া হয়েছে। এই তিনটি কারণ হলো- (১) ১৬ বছরের কম বয়স্ক (২) স্ত্রীলোক ও (৩) পীড়িত বা অক্ষম ব্যক্তি।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিনের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে- ‘(১) জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী বলে বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসংগত কারণ থাকলে তাকে উক্তরূপে মুক্তি দেওয়া যাবে না।

তবে শর্ত থাকে যে, এরূপ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ষোলো বছরের নিম্ন বয়স্ক, স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে আদালত তাকে জামিনে ‍মুক্তির নির্দেশ দিতে পারবেন।

(২) তদন্ত, অনুসন্ধান বা বিচারের কোনো পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, আসামি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার মত যুক্তিসংগত কারণ নাই, তবে তার দোষ সম্পর্কে আরও তদন্তের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে, তাহলে এরূপ তদন্ত সাপেক্ষে আসামিকে জামিনে অথবা উক্ত অফিসার বা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতায় অতঃপর বর্নিতভাবে সে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে হবে। ’

তদন্তে বিলম্বের কারণেও জামিন অযোগ্য মামলায় আদালত আসামিকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় এ সংক্রান্ত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারার উপধারা (৫) এ বলা হয়েছে, যদি তদন্তটি অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে সংবাদ পাবার তারিখ হতে অথবা তদন্তের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ হতে একশত বিশ দিনের মধ্যে সম্পন্ন না হয়, তা’হলে-

(ক) সংশ্লিষ্ট অপরাধ মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা দশ বৎসরের ঊর্ধ্ব মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় না হয়, তা’হলে অপরাধটি যে ম্যাজিস্ট্রেট আমলে লইতে পারেন, তিনি স্বীয় সন্তুষ্টি মোতাবেক শর্তে আসামিকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন এবং 

(খ) অপরাধ মৃত্যুদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা দশ বৎসর মেয়াদের ঊর্ধ্বে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হয়, তাহলে দায়রা আদালত সন্তুষ্টি মোতাবেক শর্তে জামিনে মুক্তির আদেশ দিতে পারেন।

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূলনীতি হলো- চূড়ান্ত দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অপরাধী মনে না করা। তাই বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুতর অপরাধে অপরাধী হওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ থাকলে সেক্ষেত্রে তদন্তে প্রভাব বিস্তার বা সাক্ষীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, জামিন নিয়ে পলাতক হওয়াসহ নানা কারণে তদন্ত ও বিচার চলাকালে আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা হয়। তা সত্ত্বেও তদন্ত ও বিচারে বিলম্ব বা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয় সন্দেহজনক মনে হলে বা নারী, শিশু ও অসুস্থ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে তদন্ত বা বিচার চলাকালে আদালত অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন।

লেখক: আইনজীবী এবং বাংলানিউজের আইন ও আদালত প্রতিবেদক।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
কেআই/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।