ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পিরোজপুরের পিপি আলাউদ্দিনকে হাইকোর্টে তলব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
পিরোজপুরের পিপি আলাউদ্দিনকে হাইকোর্টে তলব

ঢাকা: চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমানের এজলাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো এবং স্বাভাবিক বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে পিরোজপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলা উদ্দিনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুলসহ এ আদেশ দেন।

আগামী ১৫ নভেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এক মামলায় এহসান রিয়াল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের উপদেষ্টা মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের জামিন শুনানিকালে পিপির বিরুদ্ধে এজলাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো এবং স্বাভাবিক বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে অবহিত করেন।

এরপর রেজিস্ট্রার জেনারেল বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বরাবরে উপস্থাপন করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে শুনানির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন কোর্টে পাঠাতে নির্দেশ দেন। সে অনুসারে বিষয়টি শুনানির জন্য উঠে।

শুনানির সময় হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পিপির এমন আচরণের বিষয়ে জানতে চান। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ বিষয়ে শুনানি করেন। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে হাইকোর্ট পিপিকে তলব করে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। এর আগে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অভিযোগ পাঠান।

পিরোজপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আবু জাফর মো. নোমানের পাঠানো অবহিতপত্রের ভাষ্য অনুসারে, গত ২৫ জুলাই এহসান রিয়াল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের উপদেষ্টা আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীককে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নিয়মিত জামিনের দরখাস্ত শুনানি হচ্ছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে অভিযোগকারী (বাদী) ও আসামি উভয়পক্ষের ২৫/৩০ জন আইনজীবী নিজেদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে স্বাভাবিক বিচারকাজ জামিনের দরখাস্ত শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এ সময় এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১৫ মিনিট মুলতবি দিয়ে এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় যান বিচারক। তারপর এজলাসে আসন গ্রহণ করে পুনরায় জামিন শুনানি শুরু করলে ফের আইনজীবীরা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে। আগের মতো শুনানি ১০ মিনিট মুলতবি করে বিচারক এজলাস ছাড়েন। ফের এজলাসে উঠে দুপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীদের কিছু সময়ের জন্য এজলাসের বাইরে অবস্থান করার অনুরোধ করা হয়। এ অনুরোধে উভয়পক্ষের প্রয়োজনীয় কিছু সংখ্যক আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীরা কিছু সময়ের জন্য বাইরে অবস্থান করেন। কিন্তু তখন পাবলিক প্রসিকিউটর ও তার সহযোগী কিছু আইনজীবীকে নিয়ে এজলাসে অবস্থান করলে এ মামলার আইনজীবীরা আপত্তি করেন। তখন বিচারকাজ পরিচালনায় সহযোগিতার স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য পিবিকে এজলাসের বাইরে অবস্থান করতে বলেন। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর অনুরোধ উপেক্ষা করে হঠাৎ এজলাসে উচ্চ স্বরে বিভিন্ন মন্দ ভাষায় (ব্যবহৃত ভাষা লেখার অযোগ্য) হুমকি-ধমকি দিয়ে তার পিপিশিপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে বিচারকাজে বাধা দেন বলে বিচারক অভিযোগ করেন।

এ সময়  পাবলিক প্রসিকিউটর এজলাস থেকে বিচারককে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। এক পর্যায়ে বিচারককে গাল-মন্দ করে জোর পূর্বক বিচারকাজ সাময়িক বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি হট্টগোল করে এজলাসে কর্মরত কর্মচারীদের ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে এজলাসে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবীর হস্তক্ষেপে পাবলিক প্রসিকিউটর  এজলাস ছাড়লে আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের নিয়মিত জামিন শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করেন বিচারক।  

অভিযোগে পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিনকে সম্পর্কে বিচারক আবু জাফর মো. নোমান আরও বলেন, সম্প্রতি তার পিপিশিপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের চেষ্টায় পিরোজপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে কর্মরত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও প্রকাশ্য এজলাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে সহকর্মীরা আমাকে মৌখিকভাবে অবগত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে বলা হয়, দেশব্যাপী আলোচিত এহসান গ্রুপ অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ গ্রাহকদের প্রতারিত করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং উল্লেখিত মামলাসমূহের তিন নম্বর আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীক এহসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাগীব আহসানের সহিত যোগসাজশে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে হাজির হয়ে ধর্মে অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সরল অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক এহসান গ্রুপের গ্রাহক সৃষ্টি করার কাজে জড়িত মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।