ঢাকা: ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
বিএফআইইউ, পুলিশ ও দুদকের প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে ফের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম। বিএফআইইউ-এর পক্ষে ছিলেন শামীম খালেদ আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানির সময় আদালত বিএফআইইউর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের প্রতিবেদনে দেখালেন, তারা অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল, তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা। ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তাতো সুনির্দিষ্ট করে বলা নাই। আপনাদের এই প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এই প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। এটা খাপ ছাড়া। আর পুলিশের রিপোর্টের বিষয়ে আদালত বলেন, তাদের রিপোর্ট পরিষ্কার করে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। আর দুদকের রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছে।
এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রতিবেদনে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে আসেনি, এজন্য পূর্ণাঙ্গ করে একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাচ্ছি। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এর ভ্যাট ট্যাক্স দিচ্ছে কিনা সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত।
তখন আদালত বলেন, এ সমস্ত লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণ বঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কী উন্নয়ন হয়েছে। দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে।
আদেশের পরে আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম জানন, প্রতিবেদনে সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজসহ আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, তাদের লেনদেন এবং তাদের সম্পতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশ প্রধানকে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তার থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কিনা তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন ।
আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন।
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ই–অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত সোহেল রানাকে গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেন। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ছয়জন গ্রাহক গত মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন।
রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে প্রতিবেদন চান। সে আদেশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ভারতে আটক পরিদর্শক সোহেলকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২২
ইএস/এসআইএস