ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

বাংলাদেশি ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে ব্রিটিশ হোম অফিস

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪
বাংলাদেশি ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে ব্রিটিশ হোম অফিস

লন্ডন: ব্রিটিশ হোম অফিসের উদ্যোগে ব্রিটেনের লিঙ্কনশায়ার মর্টন হল ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে একজন বাংলাদেশি ছাত্রের মৃত্যু ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও ওই ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

গত শনিবার লন্ডন শহর থেকে ১৪০ মাইল দূরবর্তী লিঙ্কনশায়ারের ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে এই ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে।



এর আগে ইমিগ্রেশন মিনিস্টার জেমস ব্রকেনশায়ার এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা বুঝতে পারছি, ওই পরিবার এখন একটি বিপর্যস্ত সময়ের সম্মুখীন। ডিটেনশন সেন্টারে এ ধরনের একটি মৃত্যুর ঘটনা বিরল হলেও অবশ্যই বিয়োগান্তক। তিনি বলেন, আটক ব্যক্তির স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়ে থাকি। তিনি বিষয়টির তদন্তের কথাও তার বিবৃতিতে জানান।

বিষয়টির সম্পর্কে জানতে বুধবার হোম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে রুবেল আহমদ নামে ওই ছাত্রের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে হোম অফিসের একজন মুখপাত্র জানান, রুবেলকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেখানে একদিন পরই সে মারা যায়।

ইতোমধ্যে, এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও হোম অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় বাংলানিউজকে। লন্ডন বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও ব্রিটিশ হোম অফিস কর্তৃক তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

হাইকমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশি ছাত্র রুবেলের মৃত্যুর খবর কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ার পর হাইকমিশনের পক্ষ থেকে হোম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

সোমবার হোম অফিস থেকে রুবেলের মৃত্যু খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানানো হয়, গত ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে দরজার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রুবেলকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে ৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা নয় মিনিটে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে হোম অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এদিকে, রুবেলের মৃত্যু নিয়ে হোম অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ব্রিটেনে বসবাসরত রুবেলের কাজিন আজমল আলী বলেন, রুবেলের মৃত্যুর খবরে আমরা স্তম্ভিত, বিধ্বস্ত।

রুবেলকে লাজুক ও শান্তশিষ্ট এক তরুণ হিসেবে মন্তব্য করে আলী বলেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ডিটেনশন সেন্টারের আরেকজন বন্দি ফোনে রুবেলের আইনজীবীকে তার মৃত্যু সংবাদ জানান।

আজমল আলী অভিযোগ করে বলেন, খবর পাওয়ার পর থেকেই আমরা বিষয়টির বিস্তারিত জানতে বার বার ডেটেনশন সেন্টারে ফোন করি। কিন্তু, সেন্টারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে হোম অফিসের প্রেস সেকশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ছুটির দিন থাকায় প্রেস অফিস বন্ধ ছিল। এরপরও আমরা ফোনে মেসেজ দেই।

তিনি বলেন, রুবেলের মৃত্যু বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কেউই আমাদের সহযোগিতা করেনি। আজমল আলীর অভিযোগ, পরবর্তীতে হোম অফিস তাদের জানায়, রুবেল আত্মহত্যা করেছে।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা এটি বিশ্বাস করি না যে, নিজের জীবন সে নিজে (রুবেল) ছিনিয়ে নেবে। শিগগিরই সে তার পরিবার সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবে, এমন আশাতেই ছিল রুবেল।

মর্টন ডিটেনশন সেন্টারের আরো কয়েকজন বন্দি রুবেলের মৃত্যু নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, রাত সাড়ে ৯টায় রুবেল তার বুকে ব্যথার কথা জানায় সেন্টার কর্তৃপক্ষকে।

২৬ বছর বয়সী একজন ডিটেনশন বন্দি রুবেলের বন্ধু আখতার সোহেল বলেন, রাতে আমাদের দরজা তালাবদ্ধ থাকে। রুবেল তার বুক ব্যথার বিষয়ে বার বার অভিযোগ করলেও তাৎক্ষণিক কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ঘণ্টাখানেক ধরে সে চিৎকার করে দরজায় বার বার ধাক্কা দিয়ে সাহায্য চাইছিল।  

রুবেলের আইনজীবী সরওয়ার খান হোম অফিসের সমালোচনা করে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রুবেলের মৃত্যুর সংবাদ সঙ্গে সঙ্গে পরিবারকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে হোম অফিস। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্বাধীন তদন্ত দাবি করেন।

সরওয়ার খান বলেন, সম্প্রতি, আমি রুবেলের জামিন চেয়ে আবেদন করেছি। সতরাং রুবেলের আইনজীবী, আত্মীয়-স্বজনসহ বিস্তারিত তথ্য অবশ্যই হোম অফিসের কাছে থাকার কথা।

তিনি বলেন, শনিবার আমি যখন হোম অফিসের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল টিমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম, তখনও তারা আমাকে কোনো বিস্তারিত তথ্য দিতে চায়নি।

রুবেলের আইনজীবী বলেন, আমদের অবশ্যই কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে এবং এক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্তের বিকল্প নেই।

ইস্ট মিডল্যান্ডস অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মর্টন ডিটেনশন সেন্টার থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর তারা একটি কল পান যে, একজন রোগীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে দুজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। কিন্তু রোগীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
শনিবার ডিটেনশন সেন্টারে রুবেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

মৃত্যুকালে রুবেলের বয়স ছিল ২৬ বছর। ২০১০ সালে টায়ার-৪ ইমিগ্রেশন আইনের আওতায় রুবেল স্টুডেন্ট হিসেবে ব্রিটেন আসেন। সম্প্রতি, তাকে অবৈধ স্টুডেন্ট হিসেবে গ্রেফতার করে লিঙ্কনশায়ারের মর্টন হল ডিটেনশন সেন্টারে পাঠায় পুলিশ। তার বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ