লন্ডন: প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নিরাপদ বিনিয়োগে আগ্রহী করতে পাউন্ড ও ইউরো বন্ড চালুর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্ট অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ইউকেবিসিসিআই-এর সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমন ঘোষণা দেন তিনি।
ইউকেবিসিসিআই দীর্ঘদিন প্রিমিয়াম বন্ড ও ডলার বন্ডের পাশাপাশি পাউন্ড বন্ড ও ইউরো বন্ড চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রিমিয়াম বন্ড ও ডলার বন্ড চালু থাকলেও পাউন্ড বন্ড নেই। ডলার বন্ডে ব্রিটেনের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে কনর্ভাসন রেটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। পাউন্ড ও ইউরো বন্ড চালু হলে ব্রিটেন ও ইউরোপ প্রবাসীরা কনভার্সন রেটের কারণে অধিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবেন না। এতে করে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হবে।
ড. আতিউর রহমান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি মোদি’র তথ্যসূত্র উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক স্থিতিশীল রাষ্ট্র। যেখানে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার অর্থনীতিও এতোটা স্থিতিশীল নয়। চলতি বছর বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। তাই এই স্থিতিশীল অর্থনীতিতে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে বাংলাদেশের জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ইউকেবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট বজলুর রশীদ অনুষ্ঠানে বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে যে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়গুলো ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের অবহিত করতে ও বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়াতে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করেছেন তারা।
ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর ও ব্যাংকিং সিকিউরিটি সিস্টেমের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ব্রিটেনের চেয়েও অধিক সুবিধা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ইউকেবিসিসিআই’র চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ইকবাল আহমেদ। তাই এ সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে গত কয়েক বছরের অভূতপূর্ব সাফল্যের অগ্রগতি তুলে ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আবরার এ আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পেছনের অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিটেন্স। রেমিটেন্স গ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দশম বৃহত্তম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে রেমিটেন্স থেকে। কেউ কেউ বলে থাকেন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান খাত হলো আরএমজি। কিন্তু মূলত রেমিটেন্স থেকেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।
আবরার আনোয়ার বলেন, প্রবাসীরা এখন চাইলেই অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের একাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। বিনিয়োগকারীরা যাতে বন্ডের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ পান- সে সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনাও সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।
প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ইউকেবিসিসিআই’র পরিচালক ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহা, ইউকে ট্রেইড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বাংলাদেশের পরিচালক রুজিনা হাসান ও ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দীন।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ইউকেবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী প্রবাসী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের জানান, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যেকোনো সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করলে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেকোনো পরামর্শ ও তাৎক্ষণিক উত্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ভিজিট করে মন্তব্য করলে তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
এএসআর