কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় প্রতি মাসে প্রায় কয়েক শত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী পার্ট টাইম জবের সুবিধার নামে নানা বিড়াম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন।
সম্প্রতি কুয়ালালামপুররে এরকম বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ অভিযোগ করেছেন।
মালয়েশিয়ায় পড়তে আসা বাংলাদেশি ছাত্র সাকলাইনের (ছদ্মনাম) বাসা রাজধানীর কল্যাণপুরে। গত জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় এসেছেন তিনি।
পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে একটি স্থানীয় এডুকেশন কনসালটেন্টের মাধ্যমে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। ।
এডুকেশন কনসালটেন্টরা কথা দিয়েছিল মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে ভালো আয় করা যায়। তার মা-বাবা ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।
সবই ঠিক আছে, পার্ট টাইম জবও করছেন তিনি। কিন্তু এতে যে আয় হয়, তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বহন করে, নিজের থাকা খাওয়া বাদ দিয়ে অল্প টাকা বাঁচে।
এ দিকে কাজ করেও আরাম নেই, কাজের পর পড়াশোনা করার সময় পাওয়া যায় না। ক্লান্তিতে মাথা ঘুরায়।
কাজের চাপে প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলও ভালো হয়নি তার। আবার কাজ ছাড়াও গতি নেই। দেশে মা-বাবার কাছে কষ্টে মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না কিছু।
তাদের অনেক কষ্টের টাকা ব্যয় করে জীবন বদলের আশায় এসেছেন এখানে। বাসায় বাবা-মা জানেন ছেলে তাদের বেশ ভালো এবং শান্তিতে আছে।
শুধু সাকলাইন নয়, তার মতো অনেকে এভাবেই জীবন-যাপন করছেন মালয়েশিয়ায়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সমস্যাটা বেশি। মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করার সময় কোনো ফুলটাইম চাকরি নেই। পার্ট টাইম চাকরি শুধুমাত্র এখানকার রেস্টুরেন্ট অথবা শপিং মলের দোকানে। আর পার্ট টাইম বললেও, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার নিচে কেউ কাজ দিতে চায় না। তাই পার্টটাইমের নামে ফুলটাইম, কিন্তু বেতন প্রতি ঘণ্টায়। ঘণ্টায় বেতন দেওয়া হয় ৫-৭ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত = ২৪ টাকা)।
মাসে আয় ১২০০-১৫০০ রিঙ্গিত। থাকা, খাওয়া যাতায়াত এ খরচ হয় প্রায় মাসিক ৫০০-৭০০ রিঙ্গিত।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ প্রায় মাসে ৬০০-৭০০ রিঙ্গিত। হাতে অনেক কম অর্থ থাকে। অনেকে কাজের চাপে আর লেখাপড়া করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে যাওয়া তো দূরেই থাকুক।
হ্যাঁ, কাজের সুযোগ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিযোগিতার দৌঁড় অনেক। শুধুমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এবং দক্ষদের চাকরিতে সুযোগ বেশি। বাকিটা ব্যবসায়।
তাই মালয়েশিয়ায় পার্ট টাইম জবের লোভে এসে স্বপ্ন ভঙ্গ করার আগে কিছুটা ভাবতে হবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের।
প্রথমে আপনি যে প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত নিন। বর্তমান গুগল আর ফেসবুকের যুগে এটি কঠিন কোনো কাজ নয়।
সবকিছু না জেনে বিদেশে পাড়ি দেবেন না। দেশে থেকে যতটা না সহজ মনে হয় তার থেকে অনেক কঠিন।
আমরা সাকলাইনের মত আর একটি স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প শুনতে চাই না। এরকম স্বপ্ন তৈরির সুযোগও দিতে চাই না।
মালয়েশিয়ার যে কোনো ব্যাপারে জানতে এবং জানাতে লিখতে পারেন এই ঠিকানায়: khairulbn24@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৪