কোয়ানতান (মালয়েশিয়া) থেকে: তাসনুভা সারোয়ার তুন্না (২৮)। তার ভালোবাসায় বাঁধ সেধেছে ‘ডিপেন্ডেবল ভিসা’।
কারণ, দেশটির অভিবাসন আইন অনুসারে এ ক্যাটাগরির ভিসায় এ দেশে আসা কেউ চাকরি করতে পারবেন না।
উচ্চশিক্ষার জন্যে প্রায় চার বছর অাগে মালয়েশিয়ায় এসেছেন তাসনুভা। পাহাং প্রদেশের রাজধানী কোয়ানতানের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মালয়ে (আইআইইউএম) ফার্মেসি অনুষদে ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজিতে পিএইচডি করছেন।
অন্যদিকে বিবিএ শেষে দেশেই একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন মুন্সীগঞ্জের সন্তান কাজী ইয়াসির জহির উদ্দিন (৩২)। পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে ভালোই চলছিলো তার। থাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে।
পাত্র হিসেবে পরিবারের পছন্দ হয় জহিরকে। বিয়ের জন্যে তাই দেশে ফেরার ডাক পড়ে তাসনুভার।
প্রথমে পরিবারের পছন্দ। পরে বর-কনের পছন্দও মিলে যাওয়ায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা।
তবে উচ্চশিক্ষার জন্যে বিয়ের এক মাসের মাথায় কষ্ট নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে হয় তাসনুভাকে। কিন্তু মন পড়ে থাকে দেশে, প্রিয় স্বজনের কাছে।
তাসনুভার এ অবস্থায় তার কাছেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কাজী ইয়াসির জহির। নিজের মা-বাবা, পরিবার, ব্যবসা- সবকিছু ত্যাগ করে ভালোবাসার জন্যেই সম্মতি দেন স্ত্রীর পাশে থাকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় মাসে ৬শ’ রিঙ্গিত ভাড়ায় ওঠেন ডুপ্লেক্স ভবনে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার টাকা।
দ্রুত ‘ডিপেন্ডেবল’ ভিসায় জহির মালয়েশিয়ায় গেলেও বিপত্তি বাঁধে ভিসার শর্তে। কর্মঠ হওয়া সত্বেও বিধি অনুসারে কোনো কাজই করার সুযোগ নেই জহিরের।
রাজধানীর তেজঁগাও নাখালপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তাসনুভা। বাবা গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়।
দেশে ও লেভেল, এ লেভেল শেষ করে ফার্মেসিতে অনার্স, মাস্টার্স করেন বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটি থেকে।
তারপর পিএইচডি করতে চলে আসেন এ দেশে।
তাসনুভা সারোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশে ডিপেন্ডেবল ভিসায় যাওয়া ব্যক্তিদের কাজ করার সুযোগ থাকলেও এখানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আবার আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের কাজ করার ব্যাপারেও রয়েছে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ। এখানে রিফুয়েলিং স্টেশন, রেস্টুরেণ্ট, ডিপোর্টমেন্টাল স্টোর- এসব স্থানেই কেবল খণ্ডকালীন কাজ করা যায়’।
‘আমি পিএইচডির শিক্ষার্থী, তার ওপরে নারী। যে কারণে সময়, সুযোগ আর পরিস্থিতির কারণে এসব জায়গাতেও কাজ করা মুশকিল’।
তবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে ডিপেন্ডেবল ভিসায় আসা স্বামীদের কাজের ব্যবস্থা থাকলে সুবিধে হতো বলে মন্তব্য তাসনুভার।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর অনেকটা সময় কাটে এখন বসে থেকে। তবে কাজের কাজ একটা হয়েছে। পড়াশোনা বাদে পুরোটা সময়ই আমরা একসঙ্গে ঘুরি। আমাকে গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে নিয়ে যায়, আবার নিয়ে আসে। আমার জন্য স্যাক্রিফাইস করছে’।
‘এভাবেই চলছে দু’জনের জীবন’।
তাসনুভার জীবনসঙ্গী কাজী ইয়াসির জহির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইচ্ছে করলে লুকিয়ে খণ্ডকালীন কিছু কাজ করা যায়। কিন্তু করি না। কারণ, তাসনুভা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেটার সন্মান রক্ষার দায়িত্ব আমারও’।
‘আসলে কিছু পেলে তো কিছু হারাতেই হয়। না হয় না পেলাম কাজ। প্রিয় মানুষকে পরস্পরের কাছে পেয়েছি। এটাই বা কম কি। ভালোবাসার কাছে এ সান্ত্বনাই যথেষ্ঠ’।
বিষয়টিতে তাসনুভা-জহির দম্পতি একমত হলেও এ দেশের অভিবাসন আইন তো আর বোঝে না তাদের ভালোবাসা আর একসঙ্গে থাকার প্রয়োজনের কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
জেডআর/এএসআর
** অনন্য উচ্চতায় ঢাকা-কুয়ালালামপুর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক