বগুড়া: বগুড়ায় দেবর মিজানুর রহমানকে (২৫) বাঁচাতে নিজের লিভারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাবি নাসনীন হীরা তিথি (২৬)।
মিজানুরের লিভারের প্রায় ৮০ ভাগ অকেজো।
বগুড়া শহরে মিজানুর ও তার ভাইয়ের একটি মোবাইল শো-রুম আছে। এক কন্যা সন্তানের জনক মিজানুর পরিবারের সকলকে নিয়ে বেশ ভালই ছিলেন। গত জুলাই মাসে মিজানুর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। দেশের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও ভাল ফলাফল পাননি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের চেন্নাইয়ে যান মিজানুর। চেন্নাইয়ের রিলা হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তার লিভারের প্রায় ৮০ ভাগ অকেজো।
চিকিৎসকদের মতে তাকে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন (প্রতিস্থাপন) করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলেন, শুধু অপারেশনেই অর্ধ-কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর লিভার সংগ্রহ করতে হবে নিজেদেরই।
এমতাবস্থায়, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ির সবচেয়ে আদরের ছোট ছেলেকে বাঁচাতে দিন-রাত নানা দিকে ছুটতে থাকেন বাবা-মা, ভাই-ভাবি ও স্ত্রীসহ সবাই।
এমন সময় আশা জাগান মিজানুরের ভাবি (মোক্তার হোসেনের স্ত্রী) নাসনীন হীরা তিথি। দেবরকে বাঁচাতে নিজের লিভার (কিছু অংশ) দিবেন বলে জানান তিনি। এতে শঙ্কা কাটে লিভারের। তবুও অনিশ্চয়তায় ঘেরা মিজানুরের জীবন।
কেননা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন জন্য জায়গা-জমি, গহনা সব বিক্রি করেও ৫০ লাখ টাকার অর্ধেকও জোগাড় করতে পারেননি। এর আগে মিজানুরের চিকিৎসায় সবমিলে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। নিজ পরিবার ও স্বজনদের সহায়তায় নিয়ে এ খরচ বহন করা হয়। কিন্তু এখন তার পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে মিজানুর শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছেন।
মিজানুরের বাবা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নিজেদের সবকিছু আর মানুষের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু মিজানের চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা।
মিজানুরের ভাই মোক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা দুই ভাই লিভার দিতে চাই। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। পরিবারের এমন তীব্র সংকটের সময় এগিয়ে আসেন আমার স্ত্রী। তিথি নিজ ইচ্ছায় মিজানুরকে লিভার দিতে চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, লিভারের ব্যবস্থা হলেও চিকিৎসায় লাগবে আরও ৫০ লাখ টাকা। খুব দ্রুত এই টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে আমার ভাইকে বাঁচানো যাবে না।
মিজানুরের ভাবি নাসনীন হীরা তিথি বাংলানিউজকে জানান, আমার কোনো ভাই নেই। আমার দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। মিজানকে আমি আমার ভাই মনে করি। আমি নিজ ইচ্ছায় দেবরকে বাঁচাতে লিভার দিবো। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েই আমি বাঁচতে চাই। সব জেনে বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু বাংলানিউজকে জানান, সুস্থ ও জীবিত দাতার লিভারের একটা অংশ নিয়ে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। দুই-তিন মাসের মধ্যেই দাতা ও গ্রহীতার লিভারের অংশগুলো বেড়ে স্বাভাবিক আকৃতি পেয়ে যায়। সব ঠিক থাকলে লিভার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মিজানুর ও তার ভাবি দুজনই ফিরতে পারেন স্বাভাবিক জীবনে।
মিজানুর রহমানকে বাঁচাতে সহপাঠী-সহকর্মী থেকে স্থানীয়রা নানাভাবে এগিয়ে এসেছেন। তার অসহায় মা দিনরাত হাসপাতালে আর্তনাদ করছেন। বাবা, ভাই-ভাবি, স্ত্রীসহ সবার প্রচেষ্টায় মিজানুর রহমান আবারও সুস্থ হয়ে ফিরবেন এটাই চাওয়া সবার। সকলের ভালোবাসায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মিজানুর নতুন করে বাঁচার আশায় স্বপ্ন দেখছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
এসআইএ