ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পার্বত্য শান্তিচুক্তি: ২৫ বছরে বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
পার্বত্য শান্তিচুক্তি: ২৫ বছরে বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট

রাঙামাটি: আজ ২ ডিসেম্বর। শান্তিচুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় দু’দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করার জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইতিহাসে যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নামে পরিচিতি।

রাঙামাটিতে শান্তিচুক্তির আগে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণ বাঁচানোর আতঙ্কে বসবাস করলেও চুক্তি পরবর্তীকালে জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যির প্রসার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।

যেসব খাতে বেড়েছে উন্নয়ন
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্গম এলাকায় পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছে। যেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো হয়েছে।  

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে কাপ্তাই হ্রদের উপর তৈরি করা হয়েছে চেঙ্গী সেতু, ঝুলক্ক্যা পাহাড়-পুরানবস্তী সেতু, আসামবস্তী ব্রাক্ষণটিলা সেতুসহ অসংখ্যা ছোট-বড় সেতু। শহরের সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল। তৈরি করা হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটাতে তৈরি হচ্ছে বরকল ঠেগামুখ স্থলবন্দর।  

শিক্ষা খাতেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এ সরকারের বড় চমক। এছাড়াও রাঙামাটি সরকারি কলেজ ভবনকে সম্প্রসারণ, অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় এ সরকারের আমলে।

বেড়েছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত
ব্যাপক উন্নয়ন হলেও থেমে নেই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। প্রতিনিয়ত পাহাড়ের কোনো না কোনো স্থানে গুলি বিনিময়, খুন হচ্ছে। অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র কার্যক্রম থাকলেও চুক্তির পর বর্তমানে পাহাড়ে ছয়টি স্বশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে নতুন দু’টি হলো- মিয়ানমারের আরাকান আর্মি সমর্থিত মারমা লিবারেশন আর্মি ও রাঙামাটি-বান্দরবান-ভারত সীমান্ত নিয়ে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এসব সংগঠনগুলোর কাজ হলো- এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা। চাঁদা আদায়য়ের এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে স্বশস্ত্র সংগঠনগুলো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

পাহাড়ের নেতারা যা বলছেন
রাঙামাটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পিসিজেএসএস’র সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, পিসিজেএসএস’র কোনো স্বশস্ত্র গ্রুপ নেই। চুক্তির পর আমরা সব অস্ত্র জমা দিয়েছি। আমাদের নাম কলুষিত করছে একটি বিশেষ শ্রেণী।

সাবেক গেরিলা এ নেতা আরও বলেন, আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু সরকার আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আমরাও দেশকে ভালবাসি। সমতলে যেমন সন্ত্রাসী আছে, তেমনি পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারীও আছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেক। অপারেশন উত্তোরণ চালু আছে। তবে কাউকে যেন অন্যায়ভাবে হয়রানি করা না হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা পার্বত্য চুক্তির পক্ষে, সরকারের পক্ষে। কিন্তু গত ২৫ বছরে চুক্তির পর দেখি একটি গোষ্ঠি বেশি লাভবান হয়েছে। এখানে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তাই চুক্তির কিছু ধারা পরিবর্তন চাই। নেতৃত্বে সব পাহাড়ি। কোনো বাঙালি নেতৃত্ব থাকে না। অথচ চুক্তি হয়েছিল সব সম্প্রদায়ের জন্য। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বের স্থান করে দিতে হবে।  

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, শান্তিচুক্তির বেশির ভাগ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকী ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী অপর পক্ষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, অবৈধ অস্ত্র এবং মানুষ খুন করে শান্তি আসে না। আলোচনার জন্য সরকারের দুয়ার খোলা রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ছেড়ে দিন, মানুষের জন্য রাজনীতি করুন।

>> বান্দরবানে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি 

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।