ঢাকা: দুর্নীতিবাজ মালিক ও ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক চালকসহ এসব যানবাহনে কর্মরত শ্রমিকরা।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিক্সা, মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি. নং-২৯৭৮) আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে তারা বলেন, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। এনিয়ে আমরা ইউনিয়নের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনসহ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবি পূরণ হয়নি।
তারা বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সিএনজি, অটোরিকশার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা হলেও মালিকরা ১১০০-১২০০ টাকা নিচ্ছেন। আইনে শিফটিং পদ্ধতি না থাকলেও মালিকরা দুই-তিন শিফট চালিয়ে ১৬০০-১৭০০ টাকা আদায় করছেন। কোনো শ্রমিক আপত্তি জানালে চাবি রেখে দেওয়া ও চাকুরি হারানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া সিটি টোলের নামে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৭০টি স্থানে চাঁদাবাজি চলছে উল্লেখ করে তারা বলেন, রাজধানীতে পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু নো-পার্কিংয়ের মামলা, কথায় কথায় র্যাকারিং এবং ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বিমানবন্দর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে শ্রমিকরা অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অটোরিকশা শ্রমিকদের এই পেশায় থাকা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
মিটার চেকিংয়ের নামে ট্রাফিক পুলিশ শ্রমিকদের হয়রানি করছে অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, ২০১৫ সালের পরে ৫ ধাপে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু মিটার রিডিং বাড়েনি। এতে ট্রাফিক পুলিশি মিটার চেকের নামে চালকদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ মালিকসহ পুলিশের হয়রানি, এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিকরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাই শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আমরা ৯ দফা দাবি জানাচ্ছি।
তাদের দাবিগুলো হলো- ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত চালকদের নামে ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া অবিলম্বে কার্যকর করা, মিটারের ভাড়া প্রথম ২ কি.মি. ১৫০ টাকা, পরবর্তী প্রতি কিলো ৬০ টাকা এবং ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিট ৫ টাকা নির্ধারণ করা। মিটারে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত মালিকদের দৈনিক জমা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৯০০ টাকার বেশি আদায় না করা। মিটারের সঙ্গে হায়ার ফর ডিভাইস দৃশ্যমান স্থানে লাগানো ও চালকদের দ্রুত নিয়োগপত্র দেওয়া। সিএনজি অটোরিকশার জন্য প্রতিটি গ্যাস পাম্পে আলাদা নজেলের ব্যবস্থা, পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত নো পার্কিং মামলা না দেওয়া, ডোপ টেস্টের নামে পেশাদার অপেশাদার বৈসম্য দূর করে সবার জন্য ডোপ টেষ্ট বাধ্যতামূলক করা, পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্ট সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে করা।
তারা বলেন, সিএনজি অটোরিকশা রাইড শেয়ারিংয়ের আওতাধীন নয়। অথচ ‘ওভাই’ নামে একটি অ্যাপস কোম্পানি মালিকদের কাছ থেকে সিএনজি অটোরিকশা অতিরিক্ত ভাড়ায় নিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে চালাচ্ছে, এটি বন্ধ করা; সিটি কর্পোরেশনের টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; সিএনজি অটোরিকশাসহ সব চালকদের জন্য প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড বরাদ্দ দেওয়া; সব চালকদের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো. বাদল আহাম্মদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন দুলালের উপস্থাপনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন এম.এ.হাসেম, রমজান আলী, এম.এ.মজিদ, নূর মোরশেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
এসসি/এমএমজেড