ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পর্দা উঠছে বইমেলার, থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
পর্দা উঠছে বইমেলার, থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়

ঢাকা: আর কিছুক্ষণ পরই পর্দা উঠবে এবারের বইমেলার। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী আয়োজিত এই প্রাণের মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পরপরই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বইমেলা।

অতীতের অপ্রীতিকর ঘটনা মাথায় রেখেই এবারের বইমেলায় যেকোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছাড়াও মেলার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।

ডিএমপি জানায়, মেলা কেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার ও শাহবাগ-নীলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবেন।

মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। এছাড়া, কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা গেট থাকবে, যাতে বের হওয়ার সময় শ্লীলতাহানি কিংবা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা না ঘটে।

মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলায় স্থাপিত ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হবে। সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার থেকেও নজরদারি করা হবে। মেলায় সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবে।

মেলার আশপাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল থাকবে। এছাড়া, সিটিটিসি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। মেলা শুরুর আগে পুরো এলাকা ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মেলায় আগতদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ব্যাগপ্যাক, ধারালো অস্ত্র ও দাহ্য পদার্থ না নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ এলাকায় শুধু পায়ে হেঁটে মেলায় আগতরা চলাচল করতে পারবেন।

টিএসসি দিয়ে যারা প্রবেশ করবেন তারা মূল চত্বরে ও দোয়েল চত্বর দিয়ে যারা প্রবেশ করবেন তারা রাস্তার দুই পাশে এবং ঢাবির জিমনেসিয়ামে গাড়ি পার্ক করবেন। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধসহ পুরো এলাকায় কোনো ভাসমান দোকান ও হকার থাকবে না। ছিনতাই-পকেটমার রোধে পুলিশের ফুট পেট্রোল ও মোবাইল পেট্রোল টিম কাজ করবে।

বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে বাড়তি ট্রাফিক মোতায়েন থাকবে। কোনো তথ্য সংগ্রহে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর থাকবে।

কন্ট্রোলরুমে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে, কেউ সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন। ব্লগার-লেখকরা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে সহায়তা চাইলে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।

বাংলা একাডেমির পাশাপাশি মেলায় আগত নতুন বই মনিটরিংয়ে লিটল ম্যাগ চত্বরে সিটি এসবি সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। মেলা বন্ধের পরে গভীর রাতে যদি আপত্তিকর বা উস্কানিমূলক কোনো বই মেলায় ঢুকানো হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব ওই স্টলের মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে সাইবার মনিটরিং করা হবে। যাতে ভার্চুয়ালি কেউ কোনো গুজব বা উস্কানিমূলক তথ্য ছড়াতে না পারে। এমন কিছু পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাইবার জগতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা রয়েছে কি-না তাও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে র‍্যাব-পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট।

এর আগে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বইমেলা প্রাঙ্গণে নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, এ বছর যেহেতু করোনার কোনো প্রভাব নেই, আমরা আশা করি অনেক বেশি দর্শনার্থী বই মেলায় আসবেন। আমরা সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। বইমেলাকে কেন্দ্র করে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণ, শাহবাগ, পলাশীসহ আশপাশের এলাকা কড়া নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

উস্কানিমূলক কোনো প্রকাশনা বা লেখা যাতে না হয় সেজন্য আমার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দর্শনার্থী ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই যদি আমাদের সহযোগিতা করে এবং সুশৃঙ্খলভাবে মেলায় প্রবেশ করে- সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুষ্ঠু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
পিএম/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।