ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রূপপুর প্রশ্নে ক্ষেপে গিয়ে মন্ত্রী বললেন—সাংবাদিকদের সনদ প্রয়োজন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
রূপপুর প্রশ্নে ক্ষেপে গিয়ে মন্ত্রী বললেন—সাংবাদিকদের সনদ প্রয়োজন

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতির নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপে গেলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। বিষয় বহির্ভূত প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার সনদ নিয়েই সাংবাদিকতা করা উচিত।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের করণীয়’ বিষয়ে বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য ১১টা ১০ মিনিটের দিকে গ্রুপ মেসেঞ্জারে আমন্ত্রণ জানানো হয় সাংবাদিকদের। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী।

কর্মশালার বিষয় নিয়ে মন্ত্রীর প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্য শেষে এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা এক-দুইটা প্রশ্ন করে চলে যেতে চাই’। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘বলো ভাই, তোমাদের তো আবার সময়ের দাম আছে! তো এতগুলো কথা বললাম, এগুলো কি একটাও কাজের কথা হয় নাই? আচ্ছা বলো। ’

রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল সরবরাহে কত দেরি হতে পারে—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই ব্যাপারে এখন কিছু বলবো না। এত কথার মধ্যে তোমরা চলে গেলে রূপপুরে…। ’

এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আজকের ওয়ার্কশপের সঙ্গে এই প্রশ্ন সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ’

সিনিয়র সচিবের কথা না শেষ হতেই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝি না, তোমরা প্রফেশনাল না? আর ইউ প্রফেশনাল? লেট মি দিস অ্যান্সার। ইউ আর প্রফেশনাল, লাইক মি আর্কিটেকচার। তোমরা তো প্রফেশনাল। তোমাদের রেগুলার প্রফেশনাল স্টাডির ব্যবস্থা আছে? নাই। ’

উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক এ সময় বলেন, ‘আছে আছে’।

তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ঘোড়ার ডিম আছে তোমাদের। আমাদের একটা ইনস্টিটিউট আছে ওখান থেকে যদি সার্টিফিকেট না পাও, ইউ ক্যান নট প্র্যাক্টিস। কারণ হলো, ওটার (ইনস্টিটিউট) শুরুটা হয় আমার হাত দিয়ে। ওগুলো করো আগে। বিকজ, আমরা বাংলাদেশকে ওই জায়গায় নিতে চাই। ’

এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমাদের বাধ্যবাধকতা নাই যে, সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা করা যাবে না। ’

এরপর মন্ত্রী বলেন, ‘ওইটাই তো প্রবলেম। তোমার যদি একটা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে, কালকে বলে দিলা তুমি সাংবাদিক। তুমি তো প্রফেশনালিজমের কিছু বোঝোই না। একটা প্রফেশন, তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। একটা কথা বলে দিলা, যেকোনো জায়গা থেকে চলে আসলে, তার মানে তোমাদের কোনো স্টান্ডার্ড নাই। ’

ইয়াফেস ওসমান আরও বলেন, ‘তোমার প্রফেশনালি যদি জ্ঞান-গরিমা থাকে, ন্যাচারালি তখন তুমি একভাবে বলবা, আর যদি না থাকে আরেকভাবে বলবা। তারপরও তুমি বলছো, আমরা আসতে পারি যেকোনো জায়গা থেকে? এনিওয়ে ভাই, আমি তোমার এই কথায় যেতে চাই না। একদিন আইসো, তোমাদের বসদের সাথে কথা হয় তো, ওদের সাথেই কথা বলবো। তোমাদের সাথে বলে আর লাভ নাই। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা। এই সাবজেক্ট বাদ দিয়ে দাও। আমি ওই জন্য বলছি, তোমরা এই সাবজেস্টের ওপর ধরো না কেন? এটা বাদ দিয়ে তুমি চলে গেলে অন্য জায়গায়। এটা নিয়ে আর কোনো কথাই হবে না। তুমি এখানে আসছো কী জন্য? তুমি রূপপুরের ব্যাপারে কথা বলতে আসছো? এখান থেকে তোমার প্রশ্ন বের করতে হবে, উত্তর নিতে হবে। সেটা হলে তুমি প্রোপার জিনিসটা করলা।

এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা যারা সাংবাদিকতায় কাজ করি তারা সাবজেক্টের বাইরেও প্রশ্ন করতে পারি। আপনাকে আমরা পাই না, গত ৮-৯ মাসে আপনার প্রোগ্রামে আসিনি, এই প্রথম আসলাম। তাও আবার জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেছেন, ১১টার প্রোগ্রাম, ১১টা ১০ মিনিটে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বড় জিনিষ মনে করে চলে এসেছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে জনগণের জানার আগ্রহ আছে। জনসাধারণের ভিউ থেকে আমাদেরও অনেক কিছু জানতে হয়। ’

তখন মন্ত্রী ধমকের সুরে বলেন, ‘আমি একটা কথা পরিষ্কার বলে যাই। ইউ লিসেন টু মি। আপনারা যদি না আসতে চান, চলে যান। ’ মন্ত্রী ধমকের সুরে কথা বলায় সাংবাদিকরা বের হয়ে যেতে উদ্যত হন।

তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ইউ শুড গো। আমি বললাম, প্রশ্নটা ওটার ওপর না করে এটার ওপরে করেন। এটা বলতে পারবো না আমি?’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩ 
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।