ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফেনীতে রমরমা অবৈধ ইটভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
ফেনীতে রমরমা অবৈধ ইটভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ

ফেনী: ফেনীতে দেদার চলছে অবৈধ ইটভাটার রমরমা ব্যবসা। সংশ্লিষ্টরা অবাধে কাটছে ফসলি জমি, চুল্লিতে যাচ্ছে জমির টপ সয়েল ও গাছপালা।

মাটি কাটার ফলে যেমন জমি হারাচ্ছে তার উর্বর ক্ষমতা, তেমনি মাটি পরিবহন ও গাছপালা ও বন উজাড়ের ফলে হচ্ছে পরিবেশর ক্ষতি। পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে মাটি পরিবহন ও গাছ নিধনের কোনো নিয়ম নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার শান্তির হাট বাজারের পাশেই মেসার্স কহুমা শান্তির বাজার ব্রিক ও শান্তির বাজার ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং নামের দুটি ইটভাটার অবস্থান। এগুলোর কাছেই উত্তর কুহুমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কুহুমা দাখিল মাদ্রাসা। পাশেই রয়েছে জনবসতি।  

এভাবেই আইন লঙ্ঘন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে অবৈধ ইটভাটা। লোকালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও ফেনীতে জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে একের এক অবৈধ ইটভাটা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবে তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ইটভাটার মালিকদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের যোগসাজসে অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব ইটভাটা। কবির আহম্মদ নামের উত্তর কুহুমা গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তাদের জমিতে ঠিকমতো ফসল হয় না। ইট ভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে চলতে ফিরতেও সমস্যা হয়। এভাবে ঘনবসতির পাশে ইটভাটা থাকার কারণে বাসিন্দারা খুবই কষ্টে আছে।  

আসগর হোসেন নামে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, তাদের স্কুলের ১শ’ গজের মধ্যেই দুটি ইটভাটা। আসতে-যেতে ইটভাটার মাটিবাহী গাড়িগুলোর দৌরাত্ম্য এবং স্কুলে এলে ধোয়াঁ-ধুলার ভোগান্তি। সব মিলিয়ে খুবই কষ্টে আছি আমরা।  

এদিকে এসব ইটভাটার কারণে মরে যাচ্ছে গাছপালা, উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই পরিবেশ বিধ্বংসী এসব ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এভাবে মাটি পরিবহনের কারণে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। এমনটাই বলছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি। তিনি বলেন, পরিবেশের দিক বিবেচনা করেই সরকার পরিবেশবান্ধব ব্লক নির্মাণের জন্য উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।

শওকত আরা কলি বলেন, যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফেনী জেলায় বর্তমানে ১০৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে, বাকি ৬৮টির কোনো ছাড়পত্র নেই। অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটা বন্ধ হলে, কৃষক যেমন তার জমিতে ফলাতে পারবে সোনালী ফসল, তেমনি পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচবে স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
এসএইচডি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।