ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কালোবাজারি চক্র বাড়ায় ট্রেনের টিকিটের দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
কালোবাজারি চক্র বাড়ায় ট্রেনের টিকিটের দাম

ঢাকা: ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসে কালোবাজারি একটি চক্র বাড়াতে থাকে টিকিটের দাম। চক্রের সদস্যদের টার্গেট দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি।

সুযোগ পেলে মূল্য বাড়ে আরও।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

আটকরা হলেন- ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা উত্তম দাস (৩২), মো. ইলিয়াস (৫৯), মো. শাহ আলম (৩৪), ও মো. খোকন মিয়া (৫৫)। তাদের কাছ থেকে কালোবাজারির ৪২ টিকিটি (৫৬ টি আসন), তিনটি মোবাইল ফোন, একটি সিমকার্ড ও ১৫০০ টাকা জব্দ করেছে র‌্যাব সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র‍্যাব-৩ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে অধিক মুনাফার আশায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির একজন অন্যতম মূলহোতা উত্তম দাস। অন্যান্য সদস্যরা তার সঙ্গে মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে। এ ছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন এনআইডি ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেও এ কাজ করে।

পরে উত্তম দাসের নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘণ্টা আগে থেকে অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি শুরু করতো। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসতো, কালোবাজারি সদস্যরা তত বেশি দামে টিকিটি বিক্রি করত। সাধারণত দ্বিগুণ মূল্যে, সুযোগ বুঝে তার চেয়েও বেশি দামে এসব টিকিট বিক্রি করতো তারা।

চক্রটি মূলত সোনার বাংলা, কালনী এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতো।

র‌্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটে সক্রিয় সদস্য ৫ থেকে ৭ জন। যারা টার্গেটকৃত ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারণ যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে থাকে।

চক্রের আটক সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চক্রের মূলহোতা উত্তম দাস নিজ জেলা কুমিল্লার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করেন। রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজশে ২০১৮ সাল থেকে তিনি টিকিট কালোবাজারি শুরু করেন তিনি মূলত নিজে টিকিট কাটার কাজ না করে তার অধীনস্থ ৪-৫ জন কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ ও চড়ামূল্যে বিক্রি করেন।

চক্রের কৌশলের বিষয়ে তিনি জানান, সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চক্রের উত্তম দাসের নেতৃত্বে বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতো। এর মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিত তারা। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশনগুলোয় নিজেদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালায় তারা।

রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই নিতেন টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। অনেক সময় তারা রিকশাওয়ালা, কুলি, দিনমজুরদের অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে  টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন এনআইডি ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে এরা রেলস্টেশনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। তারা রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের কাছে কালোবাজারি টিকিট বিক্রির জন্য ঘোরাঘুরি শুরু করতো। ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করতো চক্রের সদস্যরা। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম হলেও সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি বা বিভিন্ন ছুটি কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে।

রেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশের কথা উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, উত্তমের নেতৃত্বে ও রেল কর্তৃপক্ষের একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে রাজধানীতে টিকিট কালোবাজারির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। তারা দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় উত্তম দাসের ক্লায়েন্ট আছে। যাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা মানুষের সুযোগ বুঝে চড়া দামে- কখনো দ্বিগুণ কখনো তিনগুণ দামে টিকিটগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করত। এভাবেই গত পাঁচ বছর ধরে উত্তম দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির অপকর্ম চালিয়ে আসছে।

আটকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, উত্তম দাসের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির দায়ে দুটি মামলা রয়েছে। তিনি দুবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। চক্রের আরেক সদস্য খোকন মিয়ার নামে একই অভিযোগে ছয়টি মামলা আছে। মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধেও ছয়টি মামলা আছে। তারা বিভিন্ন মেয়াদের সাজা খেটে জেল থেকে বের হয়ে একই কর্মকাণ্ডে জড়াতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।