ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই: শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই: শিক্ষামন্ত্রী ছবি: এম মুজিবুর রহমান

ঢাকা: এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।

প্রশ্ন বিতরণে ভুলভ্রান্তি ও প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই। গুজব রটতে পারে। সেই গুজব রটানো ব্যক্তি ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি হবে। আর ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। তবে গতবার যেসব জায়গায় ভুলভ্রান্তি হয়ছে, তাদের কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। অতএব আশা করি পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকসহ যারা দায়িত্বে থাকেন, তারা ভুল যেন না হয়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গুজব রটানো রোধে সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানেই কোনো ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে, কেউ গুজব ছড়াবার চেষ্টা করছে বা কিছু হচ্ছে, সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাড্ডা হাইস্কুল কেন্দ্রে পরিদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, আজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু। বাড্ডা হাইস্কুলের এই কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে প্রবেশ করেছে। নিজ নিজ কক্ষে বসে পরীক্ষা শুরুর আগে যা যা পূরণ করতে হয়, তা করছে। সবকিছুই ভালোমতো চলছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্ফুর্ততা দেখলাম। শিক্ষকরা আছেন। প্রশ্নের কোড এলো সময়মতো। যা যা পদ্ধতি অনুসরণ করার তা ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়েছে।

সংশোধনী সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংশোধনী কিন্তু সারা বই জুড়ে নয়। কোনো কোনো বিশেষ বিশেষ বিষয় ছিল, আমরা বলেছি সেগুলো পরে পড়াতে। এবার যেহেতু পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতিটা ভিন্ন, কাজেই কোনো অসুবিধা হয়নি, হবেও না আশা করি।

আগামী বছর পরীক্ষার সময় এগোবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আগামী বছর পরীক্ষা এগিয়ে আনার চেষ্টা করবো। তবে যারা পরীক্ষা দেবে তারা পুরো প্রস্তুতির সময় পেয়েছে কিনা তা দেখা হবে।  

এ বিষয়ে সারাদেশের শিক্ষকদের একটি মতামত নেওয়া হবে। তারা কোন সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে পারবেন। শুধু তো তাড়াহুড়া করে শেষ করলে হবে না। স্বস্তিতে শেষ করতে হবে। শিক্ষকদের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর আমরা পরীক্ষা এগিয়ে আনতে পারতাম। কিন্তু বন্যার কারণে আমাদের পেছাতে হলো। এইবার আমরা গত বছরের থেকে অনেক এগিয়ে নিয়ে এসেছি। সামনের বছর চেষ্টা করবো, স্বাভাবিকের যত কাছাকাছি যাওয়া যায়।

শিক্ষা বোর্ডগুলো ছয় মাস আগে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমন করে সেটি আমাদের জানাবেন। তাহলে আমরা সেই স্কুলের বিরুদ্ধে কঠোর হবো। কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়, শিক্ষার্থীদের বেতন বকেয়া থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন উদ্ধারের প্রক্রিয়া হিসেবে এটি ব্যবহার করে। যা মোটেও ঠিক নয়। গত বছর এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এবার এমন কেউ করলে, আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীদেরও শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত না। এমন সমস্যায় পড়লে তাদের বা অভিভাবকদের ৫-১০ দিন আগে বোর্ডে যোগাযোগ করা উচিত৷ অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা সচেতন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে তাদের পড়াশুনার জন্য মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পড়াশুনা যেমন জরুরি, এটিও জরুরি।

রোববার (৩০ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিনে সকাল ১০টায় বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ২০২৩ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও থাকবে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানায়, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন।

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৫০ হাজার ২৯৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রী বেড়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। এছাড়া মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২০৭টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৪ মে শুরু হয়ে ৩০ মে শেষ হবে।

মাদরাসা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল থেকে ২৫ মে এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৭ মে থেকে শুরু হয়ে ৩ জুন শেষ হবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৫ মে শুরু হয়ে ৪ জুন শেষ হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ হবে বলেও জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৩ সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিক তথ্যাদি আদান-প্রদান করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এসসি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।