ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন যে কারণে মুছে যাচ্ছে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
সৈয়দপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন যে কারণে মুছে যাচ্ছে!

নীলফামারী: পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যদের কবরের ওপরে গড়ে উঠছে স্থাপনা। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় চার শতক জায়গা জুড়ে একটি সংগঠনের কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এতে করে স্থানীয় শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহৃ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরজমিনে গেলে দেখা যায়, সৈয়দপুর সেনানিবাসের পূর্ব সীমানা তথা সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সামনে পাকিস্তানি সৈন্যদের কবরস্থানে গড়ে উঠেছে রঙিন টিন চালাসহ একটি আধাপাকা ভবন। প্রায় চার শতক জমির ওপর গড়ে উঠা ভবনটি সদর দরজার ওপরে ঝুলছে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাইনবোর্ড।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংগঠনটি ২০১৮ সালে গড়ে উঠলেও ভবটির নির্মাণ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। সংগঠনটির সভাপতি হলেন তুলশীরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান খান আর সাধারণ সম্পাদক লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বিপু।

এ নিয়ে আমিনুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, জমিটি আমরা উপজেলা পরিষদের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। আমরা যে স্থানে ভবনটি স্থাপন করেছি তার নীচে কোনো কবর নেই। আমরাও চাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা হউক।  

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সামনের দোকানদাররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রথমে অফিসের জন্য ওই জায়গা বরাদ্দ নিয়ে এখন বিশাল ভবন গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জায়গায় ঘর তোলা মোটেই সমিচীন নয়।  

সৈয়দপুরের প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা ও শহীদ মীর্জা মাহতাব বেগের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা সালাহউদ্দিন বেগ জানান, পরাজিত শক্রদের কবর সৈয়দপুরের মাটিতে আছে এটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। যুদ্ধে গুলি খেয়ে মৃত্যু বরণ করা পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানে শায়িত আছেন। আগামি প্রজন্ম যা দেখে মুক্তিযুদ্ধকে জানবে।  

এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরও জানান, ওই কবরগুলোকে ঘিরে আমরা ঘৃণা স্তম্ভ তৈরি করতে সকলের সহযোগিতা চাই।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংগঠন রক্তধারা-৭১ এর আহ্বায়ক মহসিনুল হক বলেন, পরাজিত বাহিনীর কবরস্থান সংরক্ষণ করতে হবে। ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা আট হাজার পাকিস্তনি সৈন্যকে হত্যা করেছে। যার কিছু স্মৃতি এই কবরস্থানে রয়েছে। এটি সংরক্ষণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল রায়হান বলেন, ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কবরস্থানের জায়গাটি লিজ নিয়েছিল ওই সংগঠনটি। আমরা জানি বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যেখানে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের কবর রয়েছে। বিষয়টি জানার পর এ সম্পর্কে ঊর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।