লক্ষ্মীপুর: পারভীন বেগম (৩৮) তার অটোরিকশা চালক স্বামী মো. হাসান ও চার সন্তান নিয়ে তিন বছর ধরে বাবার ঘরে বসবাস করে আসছেন। ঘরের ভিটা নিজের দাবি করে পারভীনের আপন ফুফু সোহাগী বেগম ওই বসতঘরটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলেছেন।
গৃহহীন হয়ে পড়ায় পারভীনের ১৪ বছরের মেয়ে শারমিন ও ১১ বছরের ছেলে পারভেজের কান্না যেন থামছেই না। মাথাগোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেওয়ায় তাদের মা পারভীনও চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চররুহিতা গ্রামের চুন্নু পাটওয়ারী বাড়িতে ঘটেছে এ ঘটনা। বসতঘর ভেঙে ফেলার ঘটনায় গোটা এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, পারভীন বেগম তার সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভিটের ওপর দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। তাদের বসতঘরটি নেই, শুধু ভিটেমাটি পড়ে আছে।
তারা জানান, পারভীনের ফুফু সোহাগী বেগম ভিটের জমির মালিকানা দাবি করে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে ঘরটি ভেঙে ফেলেছেন। ঘরের আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছেন। এখন খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে তাদের। আবার সেই ভিটে থেকে উচ্ছেদের কৌশল হিসেবে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে বাড়িতে পুলিশও নিয়েছেন।
পারভীনের বাবা এবং সোহাগীর ভাই আবু তাহের বলেন, আমি বাড়িতে থাকি না। তাই আমার মেয়েকে আমি আমার বসতঘরে থাকতে দিয়েছি। সে তার স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে এ ঘরে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) আমার বোন সোহাগী বেগম লোকজন এনে আমার ঘরটি পুরোপুরি ভেঙে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমার বোন সোহাগী দাবি করেছে, ঘরের নিচের জমি তার। কিন্তু এ জমি তার কেন হবে? এটা আমার। তার কাছে আমি কিছু জমি বিক্রি করেছি। এরপরও বাড়িতে আমার দুই শতাংশ জমি আছে। ওই জমিতেই আমার বসতঘর।
পারভীন বেগম বলেন, ঘটনার তিন দিন আগে আমার ফুফু সোহাগী এসে আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। আমার মেয়েটাকেও মারধর করেছেন। হুমকি দিয়ে গেছেন। নিরাপত্তার অভাবে আমি আমার চার সন্তানকে নিয়ে অন্য স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এসে দেখি বসত-ভিটেয় থাকা ঘর নেই। আমি এখন ছোট ছোট চার সন্তান নিয়ে কোথায় যাব?
পারভীনের কিশোরী মেয়ে শারমিন বলে, শনিবার দুপুরে আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার নানী সোহাগী ও তার ছেলেরা লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি অনেক কান্নাকাটি এবং অনুনয়-বিনয় করেছি, উল্টো আমাকে গালমন্দ করেছেন। আমরা এখন কোথায় যাব? আমাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। আমার ছোট তিনটা ভাই আছে, তাদের নিয়ে এখন আমরা কোথায় থাকবো। আমি সবার কাছে তাদের বিচার চাই। আমাদের ঘর ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
একই বাড়ির কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বাড়িতে সোহাগীর ঘর থাকলেও তিনি এ বাড়িতে থাকেন না। জেলা শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন৷ তার ভাই আবু তাহের যে বসতভিটায় থাকতেন, সেটি আবু তাহেরেরই। কিন্তু হঠাৎ করে সোহাগী তার বসতঘরটি লোকজন এনে ভেঙে দিয়ে যান। তিনি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। শুধু তাই নয়- সোহাগী নিজের আত্মীয়-স্বজনসহ বাড়ির লোকজনকে হয়রানি করে আসছেন। কথায় কথায় তিনি লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় সাজানো অভিযোগ দেন।
বাড়িতে না থাকায় অভিযুক্ত সোহাগীর বক্তব্য জানা যায়নি।
অন্যদিকে বসতঘর ভাঙার পরদিন রোববার (২৪ ডিসেম্বর) আবু তাহের পুনরায় ওই ভিটের মধ্যে ঘর তুলতে গেলে সোহাগী জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন বলেন, ৯৯৯-এ কল পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থলে যাই। সোহাগী অভিযোগ করেছেন, তার ভাই ওই জমিতে বসতঘর তৈরি করছেন। তিনি কল দিলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আমি দুইপক্ষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
এইচএ