ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এসকিউ গ্রুপের ৩ শ্রমিকের মৃত্যু: এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসকিউ গ্রুপের ৩ শ্রমিকের মৃত্যু: এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার

ময়মনসিংহ: দেশের অন্যতম বিসিক শিল্প নগরী ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এসকিউ গ্রুপের বিরিকিনা এবং সেলসিয়াস কারখানায় শ্রমিক কর্মচারীসহ তিনজনের মৃত্যু এবং অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে ও বাইরেও।

 

তদন্ত কমিটি বলছে, ঘটনাটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা, অবৈধভাবে ইটিপি স্থাপনে ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাসে মিশে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে শ্বাসরোধ হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তিনজন শ্রমিক কর্মচারী মৃত্যুর ঘটনার বেশকয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ক্ষতিপূরণ বা নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ফলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ভুক্তভোগী মহলে।       

অভিযোগ উঠেছে, শ্রমিক কর্মচারীসহ তিনজন মৃত্যুর ঘটনাটি গত ১০, ১২ ও ১৭ জানুয়ারি পর্যায়ক্রমে ঘটলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক প্রধান ছাব্বির ও কর্মকর্তা উত্তম ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন ও মিডিয়া থেকে আড়াল করে ধামাচাপা দিতে কলকাঠি নেড়েছেন। আর এ কারণেই দুই দফায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া অর্ধশতাধিক শ্রমিককে উন্নত কোনো হাসপাতালে না নিয়ে দায়সারাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।      

এমনকি শ্রমিক কর্মচারী মৃত্যুর ঘটনায় সবার ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ।  

তিনি বলেন, কারখানার মৃত্যুর ঘটনায় একজনের ময়নাতদন্ত হয়েছে। অন্য দুজনের ময়নাতদন্ত করেনি পরিবার। কেউ কোনো অভিযোগও দেয়নি।  

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এমন কাণ্ডজ্ঞানে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপমহাপরিদর্শক মো. আরিফুজ্জামান।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এত বড় একটি ঘটনার পর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা বিস্মিত। তবে এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির দুইটি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ঘটনার প্রাথমিক কারণ উদ্‌ঘাটনসহ ছয় দফা সুপারিশ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যদি ওইসব সুপারিশ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করা হবে, বলেও যোগ করেন এই কর্মকর্তা।  

কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণে নাখোশ ময়মনসিংহ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (স্বাস্থ্য) ডা. তাহমিনা ইয়াসমিনও।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের এমন দায়সারাভাবে সমোচীন নয়। শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক তা স্থানীয় প্রশাসনসহ আমাদেরকে জানানোর নিয়ম রয়েছে, কিন্তু তারা তা করেনি। এমনকি আমার সামনেই হাসপাতালে মৃত এক শ্রমিকের মরদেহ বহনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা নিয়েও গড়িমসি দেখেছি।      

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের রাউজান এলাকার বাসিন্দা মৃত রিফাত হাসানের স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া মুক্তা  বাংলানিউজকে বলেন, মরদেহ নিয়ে অফিস থেকে লোকজন এসেছিল। তবে তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি, বলেছে- অফিসে কাগজপত্র জমা দিতে।        

একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন নেত্রকোনা মদন উপজেলার আলোমশ্রি গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত শ্রমিক শিউলি আক্তারের ছোট বোন মোছা. শুভামনি। তিনি বাংলানিউজকে জানায়, মৃত্যুর ঘটনায় কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি তবে অফিস থেকে অফিসার এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন। যোগাযোগ করতে বলেছে।       

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এসকিউ গ্রুপের প্রশাসনিক প্রধান মো. ছাব্বির বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সেই সঙ্গে মৃত্যুবরণ করা শ্রমিক কর্মচারীরা ইন্স্যুরেন্স অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ যা পাওয়ার তা পাবে। এ নিয়ে আমার আর কোনো মন্তব্য নেই বলেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।      

এসব বিষয়ে জানতে ভালুকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহম্মেদের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।         

এদিকে এসকিউ গ্রুপের কারখানার ঘটনায় গঠিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিগত কিছুদিন ধরে কারখানার ৬ষ্ঠ তলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও এগজষ্ট ফ্যান বন্ধ রাখা এবং কারখানার পাশেই ইটিপি স্থাপন করার ফলে সেখান থেকে নির্গত ক্ষতিকারক গ্যাস (মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, এ্যমেনিয়াম) ভেতরে প্রবেশ এবং বায়ু প্রবাহে ত্রুটি থাকার কারণে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে শ্রমিক কর্মকর্তাসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে অসুস্থ শ্রমিক কর্মচারীদের দায়সারা চিকিৎসা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টিও এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।   

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি শ্রমিক নার্গিস আক্তার, ১২ জানুয়ারি রিফাত হাসান এবং ১৭ জানুয়ারি শিউলি আক্তার কারখানার ভেতরে কাজে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন: ভালুকায় ৩ শ্রমিক-কর্মকর্তার মৃত্যু: এসকিউ গ্রুপের ২ কারখানা বন্ধ

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।