ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষণের পর আত্মহত্যা: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ‘ভালো’ দিতে টাকা চেয়ে কল প্রতারকের

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৪
ধর্ষণের পর আত্মহত্যা: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ‘ভালো’ দিতে টাকা চেয়ে কল প্রতারকের

পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় দোকানে আটকে ধর্ষণের শিকার মুক্তা (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ময়নাতদন্তের ‘ভালো রিপোর্ট’ দেওয়ার কথা বলে বাদীপক্ষের কাছে টাকা চেয়েছে প্রতারক চক্র।

মামলায় ভালো ফলাফলের জন্য ময়নাতদন্তের ‘ভালো রিপোর্ট’ দেওয়ার কথা বলে প্রতারক চক্র মুক্তার বাবা গোলাম মোস্তফার কাছে শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এ টাকা দাবি করে।

ফোনকলে প্রতারকরা ঢাকার মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারের এক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েছে।  

গত ২৭ জুন সকালে উপজেলার চরদুয়ানী বাজারের মিনা লাইব্রেরি অ্যান্ড কসমেটিকস দোকানে মুক্তাকে ধর্ষণ করা হয়। সেসময় কিছু যুবক মুক্তার মুখের মাস্ক খুলে তার ভিডিও ধারণ করে। পরে বিষয়টি নিয়ে সালিশ-দরবার হবে বলে জানালে লোকলজ্জায় ২৮ জুন ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ জুলাই তার মা লিলি বেগম বাদী হয়ে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।  

মুক্তা চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এবং কাঠালতলী ইউনিয়নে উত্তর কাঠালতলী এলাকার বাসিন্দা।

তার বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, শনিবার দুপুর ২টার দিকে মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারের দিলীপ কুমার সাহা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ০১৯১৫২৩২০৮৮ নম্বরের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ১২ হাজার টাকা দাবি করে। এর বিনিমিয়ে সে মুক্তার মরদেহের ময়নাতদন্তের ‘ভালো করে প্রতিবেদন’ দেবে বলে, যাতে তিনি মামলায় ভালো ফলাফল পান।  

গোলাম মোস্তফার প্রদত্ত ওই মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন কোনো প্রতারককে টাকা না দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে রুজুকৃত মামলার আদেশ এখনো থানায় পৌঁছেনি। আদালতের আদেশ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাউকে টাকা দিতে হবে না। এমন কোনো প্রতারক যদি ফোন করে, তবে তারা  যেন এড়িয়ে যান।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে‌ অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী তার বান্ধবী মুক্তাকে নিয়ে ওই দোকানে কেনাকাটার জন্য যায়। সেখানে মুক্তাকে নিয়ে ঢোকে ওই ছাত্রী, যেখানে আগে থেকেই ছিলেন তাদের পূর্ব পরিচিত জোবায়ের ও তার বন্ধু ফয়সাল। পরে দোকানদার শাকিব তাদের চারজনকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যান। সেখানে মুক্তাকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখেন জোবায়ের। পরে ফয়সাল তাকে ধর্ষণ করেন।

বিষয়টি বেলা দেড়টার দিকে দিকে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে দোকানদার শাকিবকে তার দোকান খুলতে বাধ্য করেন তারা। এরপর ভেতরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মুক্তার মাস্ক খুলে বিভিন্ন মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন কতিপয় যুবক। ঘটনাটি নিয়ে সালিশ-বৈঠক হবে বলে স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় দিয়ে দেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে লজ্জায় পরের দিন শুক্রবার (২৮ জুন) বসতঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে মুক্তা আত্মহত্যা করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শাহাদাত জানান, দোকানের মধ্যে দুটি ছেলে ছিল। তাদের মধ্যে ফয়সাল বিবাহিত, সে মুক্তার সঙ্গে যাওয়া মেয়েটির প্রেমিক। এছাড়া জোবায়েরের সঙ্গে মুক্তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে দিতে ফয়সাল ও ছাত্রীটির সহযোগিতা ছিল।

সেসময় অভিযুক্ত জোবায়েরের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, এরকম একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। যদি আমার ছেলে এরকম কাজ করে থাকে তাহলে আমিও চাই তার উপযুক্ত বিচার হোক।

আগামী রোবার (৭ জুলাই) সকাল ১০টার সময় পাথরঘাটা পৌর শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনায় উপযুক্ত বিচার দাবি করে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন মহিলা পরিষদ, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন এনজিও, সাংবাদিক এবং সচেতন মহল।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৪
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।