ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পিএসসির প্রশ্নফাঁস

সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে কোটায় চাকরি পাইয়ে দিতেন বগুড়ার নিয়ামুল ও মামুন

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৪
সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে কোটায় চাকরি পাইয়ে দিতেন বগুড়ার নিয়ামুল ও মামুন

বগুড়া: সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে বগুড়ার দুইজন। তারা হলেন- গাবতলী উপজেলার উত্তর দোয়ার পাড়ার মৃত আব্দুল গফুর ওরফে জিল্লুরের ছেলে নিয়ামুল হাসান জেমস (৩৭) এবং একই উপজেলার বাইগুনি মণ্ডল পাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মামুনুর রশিদ (৩৫)।

 

তাদের মধ্যে জেমস ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান হিসেবে ও মামুন ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। এছাড়া তারা মিলেমিশে করেছেন নানা অপকর্মও।

এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে পিএসসির প্রশ্নফাঁস ছাড়াও সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে কোটায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এর বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। গত বছরের ১২ জুন গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। যদিও সেই অভিযোগের কোনো তদন্তই হয়নি।

নিয়ামুল হাসান জেমসের এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানায়, তাদের বাড়ির কাছে বাজারের পাশেই একটি জমির মালিক ছিলেন মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে পলাশ। তাকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়ে সেই জমি লিখে নিয়েছে জেমস ও তার শ্বশুরের পরিবারের লোকজন। এছাড়া এলাকায় ১৩ থেকে ১৪ বিঘা কৃষি জমি কিনেছেন তিনি।

স্থানীয়রা আরও জানায়, নিজের বোন জেলিকে গণপূর্ত বিভাগে, স্ত্রী মৌসুমীকে এলজিইডিতে এবং শ্যালক সাঈদকে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি দিয়েছেন নিয়ামুল হাসান জেমস। এছাড়া একই এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম স্বাস্থ্য বিভাগে ও হজরত আলীকে বীজ প্রত্যয়ন অফিসে, উনচুরখি গ্রামের ওয়াসিম ওরফে কালুকে কৃষি বিভাগে এবং সাইফুল নামের একজনকে হিসাবরক্ষণ অফিসে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন নিয়ামুল হাসান জেমস।

জেমসের মেজো চাচা আব্দুল কুদ্দুস মণ্ডল বলেন, জেমস ও তার বউ দুজনই ঢাকায় সরকারি চাকরি করেন জানি। কিন্তু কোথায় চাকরি করে সেটা জানি না। এলাকায় নিজেদেরই অনেক সম্পত্তি আছে, তাই অবৈধভাবে তার তো কোনো কিছু করার দরকার নেই।

অন্যদিকে বাইগুনী মণ্ডলপাড়ায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত মামুনুর রশিদ মামুন। বাইগুনীতে তাদের পুরোনো একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। সেখানে থাকেন মামুনের বাবা-মা, ভাই-ভাবি ও ছোট বোন। গত বছরের ঈদুল আজহার পর ঢাকায় যান তিনি। এর আগে রাজশাহীতে চাকরি করতেন মামুন। ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে মামুন স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ওই বাড়িতেই উঠেন। এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে তার। প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামুন গ্রেপ্তার হয়েছে বিষয়টি জেনে অবাক প্রতিবেশীরা। মামুন এমন কাজ করতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা।

তবে তার মাধ্যমে অনেকেই সেখানে চাকরি পেয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী রিমা সুলতানা চাকরি করছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে। এছাড়া ওই এলাকার আব্দুল গফুর সমবায় বিভাগে, তার ভাই গোলজার রহমান আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে, জয় কবির রিকো কৃষি বিভাগে, জাহিদ হাসান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে, সাইফুল ইসলাম কৃষি অফিসে কর্মরত। এছাড়াও অনেককেই চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন মামুন। এর মধ্যে অধিকাংশই চাকরি পেয়েছেন প্রতিবন্ধী কোটায়।

বাইগুনী মণ্ডল পাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নাসিম পাইকার বলেন, মামুন এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। চাকরি পাওয়ার পর তিনি কোনো জায়গা-জমি কেনা বা বাড়িঘর নির্মাণ করা এমন কিছুই করেননি। এ কারণে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তেমন কিছু জানে না।

গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব জানান, নিয়ামুল হাসান জেমস ও মামুন একই সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা যোগসাজশ করে সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে সনদপত্র জোগাড় করে দিতেন। সেই সনদ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। তাদের কারণে এলাকার প্রকৃত যারা প্রতিবন্ধী তাদের চাকরি জোটেনি।

এ বিষয়ে গত বছর একটি অভিযোগ দুদকে দিয়ে তার অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ সেটা তদন্ত করেও দেখেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।