ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুরে শতভাগ বেসামরিক অস্ত্র জমা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
মেহেরপুরে শতভাগ বেসামরিক অস্ত্র জমা

মেহেরপুর: ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কেনা বৈধ সব আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

 

নির্দেশনা অনুযায়ী মেহেরপুরের তিন উপজেলার শতভাগ বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে।  

জেলায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১১৪ আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৭৩টি জমা পড়েছে তিনটি থানায়। বাকি ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মেহেরপুর জেলা পুলিশ।

এর মধ্যে সদর থানায় ৩৯টি, গাংনী থানায় ২৯টি এবং মুজিবনগর থানায় জমা পড়েছে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র।

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলায় বর্তমানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে মোট ৩০২টি।  
জেলায় ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে বৈধ অস্ত্রধারী হয়েছেন ১১৪ জন।  
আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা না মেনে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে এসব লাইসেন্স।  

জানা গেছে, এসব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এবং বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা।  

মেহেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর মেহেরপুর বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ৩০২টি। গত ১৫ বছরে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ১১৪টি। এর মধ্যে এক নলা বন্দুক ১৪টি, দুই নলা বন্দুক ২৭টি, শর্টগান ২৬টি, এনপিবি পিস্তল ১৫, পিস্তল তিনটি, ১২ বোর রাইফেল একটি ও দুটি ২২ বোর রাইফেল রয়েছেন।  

এছাড়াও কয়েকজন লাইসেন্স নিলেও অস্ত্র কেনেননি বলে জানা গেছে।

২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মেহেরপুর জেলায় যারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন, তারা হলেন- সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল), জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস (একটি দুই নলা বন্দুক), মেহেরপুর সদর উপজেলার স্টেডিয়াম পাড়ার মেজর মো. আসাদুজ্জামান (তিনি নিয়েছেন একটি এনপিবি পিস্তল), চাঁদপুর গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম (একটি দুই নলা বন্দুক), তেরঘরিয়া গ্রামের মো. আব্দুল আউয়াল ভদ্র (একটি দুই নলা বন্দুক), নৌবাহিনীতে কর্মরত কাঁসারি পাড়ার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল মেহেদী (একটি ১২ বোরের বন্দুক), সদ্য সাবেক কাথুলি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা (একটি দুই নলা বন্দুক ও একটি শর্টগান), রাজাপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস (একটি দুই নলা বন্দুক), মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীনের ছেলে তানভীর আহমেদ খান রানা (একটি এনপিবি পিস্তল), অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গনি উল আজম (একটি পিস্তল), মেহেরপুরের সদ্য সাবেক পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন (একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল), ঝাউবাড়িয়া গ্রামের বায়েজিদ বিশ্বাস (একটি দুই নলা বন্দুক), গোপালপুর গ্রামের সামসুজ্জোহা ওরফে মোস্তফা কামাল একটি দুই নলা বন্দুক, আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুস শুকুর ইমন (শর্টগান), পিরোজপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবিব (একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল), একটি ব্যাংকের মেহেরপুর শাখার ব্যবস্থাপকের অনুকূলে একটি শর্টগান, রাইপুরের আবু হেনা মো. মামুনুর রশিদ (একটি দুই নলা বন্দুক), সুবিদপুর গ্রামের শাহানা খানম (একটি এক নলা বন্দুক), পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস (একটি পিস্তল), খোকসা গ্রামের মো. মোস্তাক আহমেদ (একটি শর্টগান), ফতেপুর গ্রামের মো. ফজলুল হক (একটি এক নলা বন্দুক), আশরাফপুর গ্রামের মো. জহিরুল ইসলাম ফিরোজ (একটি এক নলা বন্দুক), ফতেপুর গ্রামের মো. কবির উদ্দিন (একটি শর্টগান), কালীগাংনী গ্রামের মাহিরুল ইসলাম (একটি এক নলা বন্দুক), আমঝুপি গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান মুকুল (একটি এনপিবি পিস্তল), ব্যাংকের মেহেরপুর শাখার ব্যবস্থাপক (একটি শর্টগান), আমদহ গ্রামের মো. বকুল হোসেন (একটি শর্টগান), মেহেরপুর পৌর দুই নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাবেদুদ্দোজা মতি (একটি এক নলা বন্দুক), শুভরাজপুর গ্রামের মো. মঞ্জুর রহমান বিশ্বাস (একটি এক নলা বন্দুক), উজলপুর গ্রামের বাবুল হাচান (একটি শর্টগান), কুতুবপুর গ্রামের মো. ফয়সাল হোসেন (একটি শর্টগান), কালাচাঁদপুর গ্রামের রঞ্জু আহমেদ (একটি শর্টগান), ফতেপুর গ্রামের মো. মাহবুবুর রহমান (একটি শর্টগান), সুবিদপুর গ্রামের মো. মাহফিজুর রহমান (একটি অত্যাধুনিক ২২ বোরের রাইফেল), উজলপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা (একটি শর্টগান), নতুন পোস্ট অফিস পাড়ার মো. শাহাজাহান কবির (একটি শর্টগান), উজলপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান (একটি শর্টগান), শোলমারী গ্রামের বাসিন্দা সদ্য সাবেক কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম রেজা (একটি শর্টগান), টুঙ্গী গ্রামের মো. জাহিদুল হক (একটি দুই নলা বন্দুক)।  

এছাড়া সদ্য সাবেক মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহা. আব্দুস সালাম একটি পিস্তলের লাইসেন্স পেলেও তিনি অস্ত্র কেনেননি।

গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ বেগম একটি এক নলা বন্দুক, গাংনী পৌর শহরের আনারুল ইসলাম একটি শর্টগান, শিশির পাড়ার মো. মনিরুজ্জামান একটি এক নলা বন্দুক, মানিকদিয়া গ্রামের মো. একরামুল হক একটি এক নলা বন্দুক, বামুন্দীর তরিকুল ইসলাম একটি দুই নলা বন্দুক, করমদি গ্রামের আবু সাঈদ মো. দেলোয়ার হোসেন একটি এক নলা বন্দুক, বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা ষোলটাকা গ্রামের ক্যাপ্টেন মো. জয়নুল আবেদীন একটি দুই নলা বন্দুক, রাধাগোবিন্দপুর গ্রামের মো. সোহরাব হোসেন একটি দুই নলা বন্দুক, বাদিয়াপাড়া গ্রামের মো. সেলিম মাহমুদ একটি দুই নলা বন্দুক, রামদেবপুর গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান একটি দুই নলা বন্দুক, নওয়াপাড়ার মোহাম্মদ জিয়ারুল ইসলাম মুকুল দুই নলা বন্দুক, নওদাপাড়ার মো. আব্দুল মতিন একটি দুই নলা বন্দুক, তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম একটি দুই নলা বন্দুক, বিজিবিতে সার্জেন্ট পদে কর্মরত নিশিপুর গ্রামের মো. আখতারুজ্জামান একটি শর্টগান, কামারখালী গ্রামের মো. রোকনুজ্জামান একটি এক নলা বন্দুক, কাস্টদহ গ্রামের মো. জহুরুল ইসলাম একটি দুই নলা বন্দুক, হেমায়েতপুরের মো. নবিছদ্দিন একটি এক নলা বন্দুক, গাংনী উত্তর পাড়ার মো. আশরাফুল ইসলাম একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল, নিশিপুর গ্রামের জেনিস ফারজানা তানিয়া একটি এক নলা বন্দুক, সাহারবাটী গ্রামের মো. খালেদুজ্জামান একটি দুই নলা বন্দুক, চেংগাড়া গ্রামের মো. বাহাউদ্দিন একটি এক নলা বন্দুক, ছাতিয়ান গ্রামের মো. আমিরুল ইসলাম একটি শর্টগান, গাঁড়াবাড়িয়া গ্রামের মো. মনজুরুল ইসলাম একটি দুই নলা বন্দুক, মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল, হেমায়েতপুর গ্রামের মো. মিজানুর রহমান একটি এক নলা বন্দুক, চৌগাছার মো. আখতারুজ্জামান একটি দুই নলা বন্দুক, গাংনী ভিটাপাড়ার মো. রাশেদুল ইসলাম একটি এক নলা বন্দুক, করমদি গ্রামের মো. মোশারফ হোসেন একটি শর্টগান, হিন্দা গ্রামের আব্দুর রহমান একটি দুই নলা বন্দুক ও বিএনপি নেতা মো. আমজাদ হোসেন একটি এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স নিয়ে বৈধ অস্ত্রধারী হয়েছেন।

মুজিবনগর উপজেলার, নাজিরাকোনা গ্রামের এম এম সালাউদ্দিন একটি এক নলা বন্দুক, কোমরপুর গ্রামের মো. ওয়াহিদুজ্জামান একটি দুই নলা বন্দুক, এনএসআই কর্মকর্তা শিবপুর গ্রামের জিএম আলীমুদ্দিন একটি পিস্তল, সোনাপুর গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান একটি দুই নলা বন্দুক, সদ্য সাবেক মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু একটি পিস্তল, গৌরীনগর গ্রামের মো. রুমনুজ্জামান একটি দুই নলা বন্দুকের লাইসেন্স অস্ত্রধারী হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ব্যতীত) স্থগিত করে। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহীতার সংশ্লিষ্ট থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় লাইসেন্স গ্রহীতাকে নিজে বা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।