ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পুনর্বাসন না করেই ওয়াসার পাইপলাইনের সীমানা নির্ধারণ, ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৪
পুনর্বাসন না করেই ওয়াসার পাইপলাইনের সীমানা নির্ধারণ, ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের

রাজশাহী: পুনর্বাসন না করেই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সীমানা নির্ধারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।  

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে এ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষাভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস।  

তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ওয়াসা একটি কুচক্রি মহলকে ম্যানেজ করে জোরপূর্বক জমি দখল করতে চাচ্ছে। আর অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা টাকা তারা আত্মসাতের চেষ্টা করছে। তা গোদাগাড়ীর মানুষ তা হতে দেবে না।

নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম বরজাহান আলী পিন্টু বলেন, ওয়াসা ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি সওজের জায়গায় থাকা অসহায় গরিব মানুষের ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর খুঁটি পুঁতেছে। সরকারকে বলবো, আগে এসব মানুষকে পুনর্বাসন করুন। গরিব মানুষের আবাসন নিশ্চিত করুন। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখুন। এর পাশাপাশি যাদের জমি নেওয়া হচ্ছে তাদেরও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিন। তা না হলে এভাবে পাইপলাইন নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। ওয়াসা ৫ আগস্টের আগে যা ইচ্ছা তা-ই করেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভূমিহীন আনোয়ারা বেগম বলেন, তার নিজের কোনো জায়গা নেই। গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের হলের মোড় এলাকায় মহাসড়কের পাশে বাস করেন সড়ক ও জনপদের (সওজ) জায়গায়। এখন তার বাড়ির ভেতর দিয়েই যাবে রাজশাহী ওয়াসার পাইপলাইন। এজন্য ওয়াসা আনোয়ারার বাড়ির ভেতরে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি পুঁতে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে ভাঙা হবে আনোয়ারার বাড়ি। তাই পরিবার নিয়ে হঠাৎ আনোয়ারা এখন কোথায় থাকবেন তা জানেন না।

আর এ পরিস্থিতি শুধু আনোয়ারার নয়, উপজেলার কয়েক হাজার মানুষেরই। তাদের বেশিরভাগই সড়কের পাশে সওজের জায়গায় বাস করছেন। কারও কারও আছে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। তা দিয়েই চলে সংসার। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেকেরই আবার ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর দিয়েও পাইপলাইন নিয়ে যেতে চাচ্ছে ওয়াসা। তাদের জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এদিকে ওয়াসা জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য গোদাগাড়ীর সারেংপুর এলাকায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে। গোদাগাড়ী উপজেলার এ এলাকা থেকে পদ্মার পানি নিয়ে পরিশোধনের পর ৫৩ কিলোমিটার প্রধান পাইপলাইন এবং ৪৮ কিলোমিটার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিতরণ পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর পানির পাইপলাইন যেদিক দিয়ে যাবে সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে রাজশাহী ওয়াসার পক্ষ থেকেই খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকীর হোসেন জানান, উপজেলার ভেতর ব্যক্তিগত কিছু সম্পত্তির ওপর তাদের স্থাপনা করতে হচ্ছিল। তাই সেখানে ৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর মহাসড়কের পাশে আর কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। কারণ ওই জায়গাগুলো সড়ক বিভাগের। তারা ওয়াসার কাছে জমি হস্তান্তর করছে। আর সরকারি জায়গায় অবৈধ কোনো স্থাপনা থাকলে কিছু করার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৪
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।