ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আইন সংস্কার হলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা হবে: পিআইবি মহাপরিচালক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৪
আইন সংস্কার হলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা হবে: পিআইবি মহাপরিচালক ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার: কেন? কীভাবে?’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন পিআইবি মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকের থেকে সাংবাদিকদের বেতন কম। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকরা রক্ত দিয়েছেন, দিয়ে দিয়ে... তারা এখনো দিচ্ছেন।

আমাদের সব পেশার একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার কি সুরক্ষা আছে? আমাদের যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, সেটাকে তি আরও শক্তিশালী করতে হবে? নাকি প্রেসক্লাব দায়িত্ব নেবে, নাকি আমাদের সবচেয়ে বড় যে হোতা প্রেস কাউন্সিল, সেটাকে সত্যিকারভাবে শক্তিশালী করা এবং তার মধ্যদিয়ে অনেকগুলো কাজ ঠিক করতে হবে। আমাদের যদি কম্পিটিশন বাড়ে তাহলে ভালো সাংবাদিকরা সামনে আসবেন। আর আমাদের আইন যদি সংস্কার হয় তাহলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা হবে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার: কেনো? কীভাবে?’ শীর্ষক একটি মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আমরা সাংবাদিকতাকে বলি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু এই স্তম্ভের খেয়ালতো আমরা করিনি। আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের প্রশাসন সেগুলোর দিকে মনোযোগ ছিল। কিন্তু আমরা এমন এক ট্রেন, যে আমরা সবার দিকে লাইট ফেলি কিন্তু নিজের দিকে আমাদের লাইটটা পড়ে না। আমরা নিজেরা নিজেদের অন্ধকারে রেখেছিলাম। আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর, এগুলো আমরা বলি কিন্তু আমরা এর আগে নিজেদের নিয়ে এভাবে কথা বলেছি?

তিনি বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আমরা সাংবাদিকরা এটা পাহারা দেওয়ার জন্য আমরা কি ভূমিকা পালন করব? আমাদের বিগ পাওয়ারহুড এবং বিগ মিডিয়া, এটা আপনাকে ছোট করতেই হবে। একজন মালিকের একটার বেশি মিডিয়া থাকতে পারবে না। তারপর কালো টাকার মালিকদের মিডিয়াতে আসা কীভাবে বন্ধ করা যায়, আপনি মিডিয়া বন্ধ না করেন, আপনি তাকে কালো টাকার জায়গায় ধরেন; তার যে অর্থনৈতিক অবদান সেখানে তাকে ধরেন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ যেন না ওঠে।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, আমাদের তরফ থেকে আমরা বলতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মিডিয়া ফ্রিডম, প্রেস ফ্রিডম নননেগোশিয়েবল। এই জায়গায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করব না। আপনারা দেখেছেন প্রায় দুই মাস এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কোথাও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয়েছে? আমি মনে করি স্বাধীনতার পরে গত দুইটা মাস ছিল গোল্ডেন পিরিয়ড।  

তিনি বলেন, কিন্তু কথা হচ্ছে, এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা ধরে রাখব কীভাবে। এটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, আগের সরকারে আমরা যে সমস্যাগুলো ফেস করেছি, পরবর্তীতে একটি রাজনৈতিক সরকার আসলে যেন সেই সমস্যা ফেস না করতে হয়। পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা হয়তো আরও ভালো করবে। কিন্তু আমরা যে ভয়ের সময় কাটিয়েছি, সেটা যে আবার পুনরাবৃত্তি হবে না, সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই। যতগুলো কালো আইন আছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের মিডিয়ার সংস্কার কমিশন কথা বলবে।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ওয়েজ বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে তাকে ‘বোর্ড অব স্যালারি অ্যান্ড বেনিফিট’ করার পরামর্শ দিয়ে সব ধরনের সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে যেসব মালিক ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দিতে পারবেন না, তারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবেন না; পাশাপাশি তিন মাস ছয় মাস বেতন না দিলে কী শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, তা নির্ধারণ করা এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে মূলধন থেকে কর্মীদের পাওনা মেটানোর সুপারিশ করা হয়।

গণমাধ্যমকে সংস্কার করার জন্য সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করার পাশাপাশি, প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করে প্রতিটি হাউজে তিন মাস অন্তর অন্তর পরিদর্শন করা, যাতে হাউজগুলো ঠিকমতো চলছে কি না, তা মনিটরিং করা।

একই সঙ্গে সিকিউরিটি আইন বাতিল করার সঙ্গে ফেইক নিউজ বা মিসইনফরমেশন নিয়ন্ত্রণে আলাদা সংস্থা বা ডেস্ক করা, যাতে ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা কমে। পাশাপাশি অপসংবাদিকতা প্রমাণিত হলে তার জন্য শাস্তির বিধান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।  

আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আয়োজক প্ল্যাটফর্ম মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির।  

তিনি বলেন, ব্যক্তি ও সমাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যম–ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। লিখিত বক্তব্যে জিমি আমির বলেন, বিচারহীনতা ও জবাবদিহি না থাকায় এবং চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে মাঠের সাংবাদিকদের লেজুড়বৃত্তি সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে উঠছে। ‘পেশাদার’ সাংবাদিকদের লেজুড়বৃত্তির চর্চা এখন আর অপ্রকাশ্য নয়। প্রেসক্লাব, ডিআরইউ, ডিইউজে, বিএফইউজে বা আরও সাংবাদিক সংগঠন থাকার পরও বিভিন্ন বিটভিত্তিক, বিভাগভিত্তিক ও জেলাভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা পিকনিক, গিফটের নামে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের কাছে চাঁদা দাবি করে থাকে। যাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কথা, উল্টো তারাই সাংবাদিকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও কথা বলেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিম খান, আহমেদ জুয়েল, কাওসার মাহমুদ, খাজা মইনউদ্দিন, অধ্যাপক আর আর রাজী, আসাদুল কিবরিয়া, আরিফুল সাজ্জাদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।