ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গাপূজা ও প্রবারণার ছুটি, লাখো পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার  সৈকত

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৪
দুর্গাপূজা ও প্রবারণার ছুটি, লাখো পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার  সৈকত

কক্সবাজার: হিমছড়ি পর্যটন স্পটের পাহাড়চূড়ায় দাঁড়ালেই দূর থেকে দেখা যায় নির্মল সৈকতের অপার সৌন্দর্য। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখা বা একসঙ্গে পাহাড় সমুদ্রের সৌন্দর্য অবলোকন কক্সবাজারেই দেখা মেলে।

তাই তো টানা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে ভ্রমনের জন্য কক্সবাজারকে প্রথমে বেছে নেন ভ্রমনপিপাসু পর্যটকেরা। এবার শারদীয় দুর্গোৎসবের টানা চারদিনের ছুটিতে এখানকার পাহাড়-সমুদ্রের নির্মল প্রকৃতি দেখতে কক্সবাজার আসছেন লাখো পর্যটক।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ এবং সবকিছু ঠিক থাকলে চারদিনের ছুটিতে কয়েক লাখো পর্যটকের সমাগম হবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ তেমন ঘুরতে বের হয়নি। এরমধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল কক্সবাজার। তবে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক আসা শুরু করেছে।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন ছুটি পড়ছে। এই ছুটি কাটাতে এর মধ্যে শহরের হোটেল-মোটেল,গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টের ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলে আগামী ১১ ও ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো কক্ষ খালি নেই।

আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।  

এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানে পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়।

১৬ অক্টোবর রয়েছে বৌদ্ধসম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা । এ উপলক্ষে পরদিন (১৭ অক্টোবর) রামুতে বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। বাঁশ, বেত, কাট ও রঙ্গিন কাগজে অপরূপ কারুকাজে তৈরি এ জাহাজ ভাসানো উৎসব অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলায় পরিণত হয়। যদি দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন নিয়ে শংকিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়।

এছাড়াও গতকাল মঙ্গলবার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে যাদের পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তারাও কক্সবাজার আসবেন বলে ধারণা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার জন্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।   

বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের লাবনী, সিগাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট পর্যটকদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়।  

সৈকতের বিচকর্মী বেলাল হোসেন জানান, সকাল থেকেই পর্যটকের আগমন বেড়েছে। বিকালে আরও বাড়বে। আশা করছি কাল বৃহস্পতিবার থেকে সৈকতে ভিড় বাড়বে।

এদিকে দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নতুন করে সাজানো হয়েছে। শহরের রাস্তাঘাট ও ফুটপাত পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ চলছে। কয়েকদিন ধরে জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী পর্যটন এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাচ্ছে।

পর্যটকদের ভ্রমণ ও সমুদ্রসৈকতে ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।

কক্সবাজার শহরের শৈবাল ট্যুর অপারেটরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, অক্টোবর মাস থেকেই মূলত পর্যটন মৌসুম শুরু। দীর্ঘদিন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পর্যটক কম ছিল। আশা করছি এবার দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজারেলাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে।  

আগামী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত শহরের তারকামানের হোটেলগুলোর প্রায় বুকিং হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

শহরের সমুদ্রপারের তারকামানের হোটেল কক্সটুডে'তে কক্ষ আছে ২৪৫টি। আগামী শুক্র ও শনিবারের জন্য তাদের সব কক্ষ বুকিং আছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব শাহ।

তিনি বলেন, আবহাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আশাকরি এ মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।

ফেডারেশন অব টুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজে এক লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। দুর্গাপূজার ছুটিতে ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। তারকামানের হোটেলগুলোতে এ হার আরও বেশি।  

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, টানা ছুটিতে পর্যটক সমাগম ও সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে এবার কক্সবাজারে লাখো পর্যটকরের সমাগম হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে এবং সৈকতে বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে  কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পোষাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি  সাদা পোশাকে কাজ করবে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটকদের সেবা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান টিম মাঠে থাকবে। পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে।

ভ্রমনে আসা কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হয়, কোথাও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে কিনা, সেসব বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে দেখভাল করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
এসবি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।