কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হলো দেশের বৃহত্তম প্রতিমা বিসর্জন উৎসব। যেখানে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে জেলার নয় উপজেলার শতাধিক প্রতিমা।
প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে নিরাপত্তা জোরদার করতে সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ ছয়স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হয়ে থাকে কক্সবাজার সৈকতে। কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এ উৎসবে। এখন কক্সবাজার ভ্রমণ করছেন লাখো পর্যটক। সব মিলে আজও কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।
বিসর্জন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। সড়কের যানজট এড়াতে লাবনী মোড় থেকে শুধু প্রতিমাবাহী ট্রাক ছাড়া সব ধরনের যানবাহন ভেতরে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। ফলে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়।
দুপুরের ২টার পর থেকে জেলার বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা আসা শুরু হয়। এক পর্যায়ে প্রতিমা আর পূজারিতে ভরে যায় লাবনী পয়েন্ট। এ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে। বিকেল ৩টার দিকে শুরু হয় বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান বিজয়া সম্মেলন। বিকেল ৫টায় বিসর্জন মন্ত্র পাঠ করে ১৫ মিনিট আরতি শেষে একে একে প্রতিমাগুলো সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়।
স্কুল শিক্ষিকা সুমি দাশ বলেন, মূলত মা দেবীকে বিদায় জানাতে এখানে এসেছি। মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা এ পৃথিবীতে যেন শান্তি বিরাজ করে। সব ধর্মের মানুষ যেন নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। সবার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে।
বিজয়া সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভাপতি দুলার কান্তি দাশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাব-১৫ এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) লুৎফুর রহমান কাজল, ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল, এবি পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক কায়সার, জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুর প্রমুখ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল বলেন, লোক সমাগমের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আজ অন্তত পর্যটকসহ কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।
তিনি জানান, এবার জেলার নয়টি উপজেলায় ৩২১টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০টি ঘটপূজা। রোববার বিকেল ৫টার দিকে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সৈকতে সমবেত সব প্রতিমা একযোগে সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
তবে এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতীতের সব আয়োজনকে ছেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি সেনাবাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে বা কেউ সাগরে ভেসে গেলে উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যানজট নিরসনে শহরের বাইরের উপজেলাগুলোর পূজামণ্ডপের প্রতিমা কলাতলী ডলফিন মোড় হয়ে এবং শহরের অভ্যন্তরের প্রতিমাগুলো প্রধান সড়কের হলিডে মোড় হয়ে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের বিসর্জন অনুষ্ঠানস্থলে আনা হয়েছে। যে কারণে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় ছিল।
এছাড়াও ট্যাফিক জ্যাম এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
এসবি/আরআইএস