ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাবলেট হিসেবে বাসায় উঠে শিশুটিকে অপহরণ করেন নারী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
সাবলেট হিসেবে বাসায় উঠে শিশুটিকে অপহরণ করেন নারী

ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুরে বাসায় ডাকাতির পর ৮ মাস বয়সী শিশুকে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তিনি শিশুটিকে দেখভালের কথা বলে ওই বাসায় সাবলেট ভাড়া নেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

তিনি বলেন, ঢাকার আজিমপুরে বাসায় ডাকাতির পর শিশু কন্যাকে অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্বার করে অপহরণকারীকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে অপহরণের পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাসা থেকে অপহৃত শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাতেমা ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে ফারজানা আক্তার নামে এক নারীর বাসায় ডাকাতি হয়। এ সময় ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেওয়ার পাশাপাশি তারা কন্যাশিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, অপহরণের এক সপ্তাহ আগে ফারজানা আক্তারের সঙ্গে অফিসে যাতায়াত করার সময় শাপলার পরিচয় হয়। এ সময় শাপলা ফারজানার কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলায় বলে মিথ্যা পরিচয় দেন। পাশাপাশি জানান তিনি অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন।

ফাতেমা আক্তার অপহৃত শিশুর মা ফারজানা আক্তারকে আরও জানান, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালও করতে পারবেন। সন্তানকে দেখাশোনার কথা চিন্তা করে ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিতে রাজি হন ফারজানা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাতেমা বাসায় আসেন এবং শিশু জাইফার মাকে ২ হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাত্রিযাপন করেন।

পর দিন শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তারকে জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে বাসায় আসবেন। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় ফাতেমা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ফাতেমা আক্তার ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ফারজানাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এ সময় তারা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভুক্তভোগী জাইফাকে নিয়ে যান।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এই পরিচালক আরও বলেন, অপহরণের পর জাইজাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগরের বাসায় চলে আসেন ফাতেমা। তার সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন। ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ফারজানা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত অন্য তিনজনের নাম সুমন, হাসান ও রায়হান। তবে তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে থেকে ভুক্তভোগী ফারজানার মাকে অনুসরণ করছিলেন। বৃহস্পতিবারই ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সেদিন ওই বাসায় ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় আসায় তারা সফল হননি। সেদিন রাতে তারা ভুক্তভোগীর পরিবারকে চেতনানাশক ওষুধও দিয়েছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহৃত শিশু আরিসা জান্নাত জাইফার মা ফারজানা আক্তার সরকারি চাকরি করেন এবং বাবা আবু জাফর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা গত তিন বছর ধরে ওই বাসায় থাকছেন। তবে গত চার মাস ধরে পারিবারিক কলহের জেরে ভুক্তভোগীর বাবা আলাদা রয়েছেন।

অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমার বিগত সময়ে কোনো অপরাধ সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে মুনীম ফেরদৌস বলেন, ওই বাসায় ফাতেমা ছাড়াও সুমন, হাসান, রায়হান নামে তিনজনের উপস্থিতি ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ফাতেমা। তবে ভুক্তভোগী শিশুর মা দাবি করেছেন, তাদের পরিচয়ের সময় বোরকা পরা আরও এক নারী ছিলেন। এখন পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে, অপহরণ করে টাকা আদায়ই ছিল লক্ষ্য। ভিকটিম শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তার ও বাবা আবু জাফরের মধ্যে দাম্পত্য মনোমালিন্য ছিল। স্বামী জাফর ওই বাসায় যাওয়া আসা করতেন। তবে তিনি বাসায় থাকতেন না। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভিকটিমের বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।