ঢাকা, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৫ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

ভুট্টাক্ষেতে মিলল দ্বিতীয় স্ত্রীর মাথাবিহীন লাশ, প্রথম স্ত্রী নিয়ে স্বামী পলাতক 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৫
ভুট্টাক্ষেতে মিলল দ্বিতীয় স্ত্রীর মাথাবিহীন লাশ, প্রথম স্ত্রী নিয়ে স্বামী পলাতক  লালমনিরহাটে মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হাসিনার বাড়ি

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে ভুট্টাক্ষেত থেকে গত বুধবার (৫ মার্চ) মাথাবিহীন অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ দিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়।

জানা যায়, মাথাবিহীন লাশটি ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কুটিবাড়ি গ্রামের ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমের। আশরাফুলের খোঁজে তার বাড়ি গেলে দেখা যায়, প্রথম স্ত্রী ও পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন তিনি। ঘর তল্লাশি করে আশরাফুলের রক্তাক্ত পোশাক উদ্ধার করে পুলিশ।  

এ খবর জানাজানি হলে শুরুতে বিশ্বাস হয়নি এলাকাবাসীর। ভ্যানচালক আশরাফুল বাইরে কোথাও গেলে স্ত্রী হাসিনাকে ভ্যানে করে সঙ্গে নিয়ে যান। কখনই চোখের আড়াল করেননি প্রিয় স্ত্রীকে। তাদের প্রেম যেন সম্রাট শাহজাহান-মমতাজকেও হার মানায়।  আশরাফুল কী করে খুন করতে পারে হাসিনাকে!

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত হাসিনা ভারতের দিনহাটা থানার হরিরহাট ইউনিয়নের জারিধল্লা গ্রামের কাশেম আলীর মেয়ে। আশরাফুল ইসলাম ২০ বছর আগে প্রেম করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন ভারতীয় বাসিন্দা হাসিনা বেগমকে। বিয়ের পর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেন হাসিনা। একটি মেয়ের জন্ম হয়। পরে সতিনের চাপে সংসার ছাড়তে হয় হাসিনাকে। পরে দুর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ি গ্রামের নুর ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় হাসিনার। সেখানেও একটি মেয়ের জন্মের পরে দুই বছরের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে। পরে পুনরায় ভ্যানচালক আশরাফুলের সংসারে ফেরেন নতুন করে বিয়ে করে। তাদের নতুন সংসারে আরও একটি মেয়ের জন্ম হয়। সেই থেকে আশরাফুলের সংসারে ছিলেন হাসিনা বেগম।  

সতিন মেহেরুন বেগমের সঙ্গে প্রায় দিন ঝগড়া লাগলেও স্বামীর ভালোবাসায় সতিনের নির্যাতনের মাঝেও সদা হাস্যোজ্জ্বল মেজাজের ছিলেন হাসিনা বেগম। স্বভাবের কারণে গ্রামের সবাই হাসিনাকে ভালোবাসতো।  

প্রথম স্ত্রী মেহেরুন বেগম একটু রাগী মেজাজের তাই ঝগড়া-বিবাদ এড়াতে দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমকে প্রায় সময় সঙ্গে রাখতেন আশরাফুল ইসলাম। ভ্যান নিয়ে বাইরে গেলে সঙ্গেই রাখতেন হাসিনাকে। পাশাপাশি দুই বাড়িতে দুই স্ত্রীকে রাখতেন আশরাফুল। তবে ছোট স্ত্রী হাসিনার ঘরেই থাকতেন বেশি। বাজার দুই সংসারে সমভাবে বণ্টন করলেও হাসিনাকে বেশি আদর করতেন। যা মেনে নিতে পারতেন না সতিন মেহেরুন। মেহেরুনের ঘরে আশরাফুলের ৪টি ছেলে সন্তান রয়েছে।

আশরাফুল-হাসিনা দম্পতির ভালোবাসার গভীরতা দেখে স্থানীয়রা তাদেরকে শাহজাহান-মমতাজ বলে আখ্যায়িত করেন। গত ৩ মার্চ (সোমবার) বিকেলেও ভ্যানে করে হাসিনাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন আশরাফুল। এরপর থেকে হাসিনার খবর পায়নি স্থানীয়রা।  

বৃহস্পতিবার সকালে হাসিনার এক আত্মীয় তার খোঁজে এসে দেখা না পেয়ে সন্দেহ হয়। সদর থানায় খোঁজ করে জানতে পারেন, মাথাবিহীন অজ্ঞাত লাশটি হাসিনার। পরে ক্লু উদ্ধার ও ঘাতক ধরতে হাসিনার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এরই মধ্যে বুঝতে পেয়ে সটকে পড়েন আশরাফুল ইসলাম। পরে ঘর থেকে আশরাফুলের রক্তাক্ত পোশাক এবং আশরাফুলের প্রথম স্ত্রী মেহেরুনের বাবার বাড়ির (পাশে) একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে আশরাফুলের আরও কিছু পোশাক উদ্ধার করে পুলিশ। তবে নিহত হাসিনার মাথা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরিচয় শনাক্তের পর থেকে আশরাফুল ও তার প্রথম স্ত্রী মেহেরুনসহ পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছেন।  

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক হাসিনার এক প্রতিবেশী বলেন, সেদিন হাসিনাকে ভ্যানে নিয়ে বের হলেও আশারাফুল একা ফেরেন। বুধবারও হাসিনা ছাড়া তার ঘরেই থাকেন আশরাফুল। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম স্ত্রীসহ তামাক ক্ষেতে কাজ করেন। পুলিশ আসার আগেই সবাই পালিয়ে যায়। এতো ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে হত্যা করে মাথা লুকিয়ে রাখতে পারে? এটা বোধগম্য হয় না।  

আশরাফুল একা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলেও দাবি গ্রামবাসীর। সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আশরাফুল-হাসিনার প্রেম সম্রাট শাহজাহান-মমতাজের মতই গভীর ছিল। কোথাও গেলে আশরাফুল ভ্যানে হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। সবাই তাদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ। হাসিনার মাথাবিহীন লাশ আর আশরাফুলের রক্তাক্ত পোশাক দেখে পুরো গ্রামবাসী অবাক। গভীর প্রেমের পরিণতি এমন বীভৎস হয় কীভাবে! আশরাফুল ইসলামের কাছেই লুকিয়ে আছে হাসিনা হত্যার মূল রহস্য।  

লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) বাদল চন্দ্র বলেন, হাসিনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় লাশ পড়ে থাকা সেই ভুট্টাক্ষেতের মালিক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হাসিনার বাড়ি তল্লাশি করে তার স্বামী আশরাফুলের রক্তাক্ত জ্যাকেট ও শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এখনও। পলাতক আশরাফুলকে আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে পেলে হত্যারহস্য উম্মোচন হবে এবং মাথাও উদ্ধার করা যাবে।  

আগের নিউজ লিংক>> লালমনিরহাটে ভুট্টা ক্ষেতে পড়েছিল নারীর মাথাবিহীন মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।