রাজবাড়ী: আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে জনসাধারণের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচলের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ডুবোচর কেটে নতুন চ্যানেল করেছে।
চ্যানেল দিয়ে ফেরি ও লঞ্চ একত্রে যাতায়াতের কথা বিআইডব্লিউটিএ বললেও প্রশস্ততার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় চ্যানেলে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যাতায়াত করছে ফেরিগুলো। অথচ গত ১৭ মার্চ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সম্মেলন কক্ষে ঈদ প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় নতুন চ্যানেল দিয়ে ফেরি ও লঞ্চ চলাচলের কথা জানানো হয়। গত ১২ মার্চ বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (মেরিন) মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং ইউনিট আরিচা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক, বাণিজ্য, মহাব্যবস্থাপক (মেরিন), বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপকসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে অবগত করা হয়।
পত্রে বলা হয়, পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় ফেরি চলাচলের জন্য নির্মিত চ্যানেলের মধ্যে কোথাও কোথাও ডুবোচর সৃষ্টি হয়ে দুর্ঘটনামুক্ত ফেরি পরিচালনা বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন, দুর্ঘটনামুক্ত ফেরি পরিচালনার স্বার্থে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া নৌপথে সোজাসুজি মধ্যবর্তী ডুবোচর এবং ৭ নম্বর ফেরিঘাটের বেসিনে ড্রেজিং করতে ৫ মার্চ পত্র দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৪ হাজার ফুট লম্বা এবং ২৫০ ফুট প্রশস্ত ডুবোচরটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ড্রেজার দ্বারা খনন করে ন্যূনতম ১৪ ফুট পানির গভীর চ্যানেল করে মার্কা ও বয়া স্থাপন করতে বলা হয়। সে মোতাবেক খনন করে ৯ মার্চ একটি রো রো (বড়) ফেরি ও একটি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া এবং দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ায় ট্রায়াল ট্রিপ দেওয়ার সময় পানির গভীরতা ১২ ফুট পাওয়া গেলেও প্রশস্ত কম থাকায় ফেরি চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া কালবৈশাখী মৌসুম হওয়ায় সরু চ্যানেলের কারণে ফেরিগুলো যেকোনো মুহূর্তে চরে আটকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নৌরুটে নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন ও দুর্ঘটনামুক্ত ফেরি চলাচলের স্বার্থে খননকৃত চ্যানেলটি পুনরায় হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে করে চ্যানেলটি আরও প্রশস্ত এবং গভীর করে চালুর কথা বলা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট সোজাসুজি পাটুরিয়ার দিকে বিআইডব্লিউটিএ এখনও ড্রেজিং করছে। পাশ দিয়ে লঞ্চ কোনোভাবে যাতায়াত করছে। ড্রেজিংয়ের পাইপসহ বয়া থাকায় লঞ্চগুলো সতর্কতার সঙ্গে চলছে। তবে ফেরি চলাচলের মতো পরিবেশ দেখা যায়নি।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ঈদ প্রস্তুতি হিসেবে নয়টি রো রো, দুটি মিডিয়াম রো রো, একটি কে-টাইপ, দুটি ইউটিলিটি, তিনটি মিডিয়াম ইউটিলিটিসহ ১৭টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ায় তিনটি করে মোট ছয়টি ঘাট প্রস্তুত রয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের ডুবোচর কেটে নতুন চ্যানেলের প্রশস্ত এবং গভীরতা কম থাকায় ফেরি চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মেরিন বিভাগ প্রতিবেদন দিয়েছে। যে কারণে কালবৈশাখী মৌসুমে ঈদের সময় এমন ঝুঁকি নিতে নারাজ। সময় বেশি লাগলেও ডুবোচর এড়িয়ে পূর্বের চ্যানেল দিয়েই ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাছান মাহমুদ বলেন, সাধারণত ১২০ ফুট প্রশস্ত চ্যানেল দিয়ে ফেরি চালানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের মাঝে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার ডুবোচর কেটে ৪ হাজার ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৬০ ফুট প্রশস্ত চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসির অনুরোধে ঈদের আগে ২৬০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ ফুট প্রশস্ত চ্যানেল তৈরির কাজ চলছে। আগামী ২৭ মার্চ চ্যানেলটি শতভাগ সম্পন্ন করতে সক্ষম বলে মনে করছি।
উল্লেখ্য, ডুবোচর অপসারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে ড্রেজিং বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
এসআরএস