মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে—এমন গুজবের পর সরেজমিনে সেখানে গিয়ে জানা গেল, শহীদ বৃদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে না। বরং সংস্কারের অংশ হিসাবে সৌধের কংক্রিট নির্মিত চারটি উইংসের কাঠামোর উপরের সিরামিকের ইট খুলে ফেলা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে জানা যায়, স্মৃতিসৌধের সংস্কার কাজ করছে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, পুরো বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরটি সংস্কারের কাজ চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সৌধের পূর্বে একটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণকাজ প্রায় সম্ম্পন্ন। গত তিনদিন ধরে সৌধ সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসাবে সৌধের মূল বেদীর চারদিকে চারটি উইংসের কংক্রিটের মূল কাঠামোর উপরের লাল সিরামিকের ইট খুলে ফেলা হচ্ছে। এরপর হুবহু ওইরকম ইট বসানো হবে।
বিষয়টি নিয়ে মিরপুর গণপূর্ত উপবিভাগের প্রকৌশলী মো. শারিয়ার সাফায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা নিয়ে যা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। এটা সংস্কারের কাজ হচ্ছে। এই নকশা একজন খ্যাতনামা স্থপতির। এর কোনরকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন করার সুযোগ নেই। যেমন আছে, যে উচ্চতা আছে, সংস্কারের পর সেরকমই থাকবে। এমনকি কতটা পূর্ণ ইট, কতটা আংশিক ইট এবং প্রতিটি ইটের মাপও যথারীতি থাকবে। কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
তিনি বলেন, এই স্থাপনার সংস্কারের কাজ মিরপুর গণপূর্ত উপ-বিভাগের অধীনে হচ্ছে। আর এটা দেখাভাল করছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখতে পারেন স্থাপত্য অধিদপ্তর উইংসগুলোর প্রতিটি ইটে নম্বরও লিখে দিয়েছে। সংস্কারের পরে হুবহু এমনই হতে হবে।
১৯৭২ সালে স্মৃতিসৌধের নামফলক উন্মোচন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। এই নামফলকও নকশার অংশ। যা স্মৃতিসৌধের মূল বেদীর মাঝখানে আছে, সংস্কারের পর সেই নামফলকটিও যথারীতি থাকবে।
প্রকৌশলী শারিয়ার সাফায়েত আরও জানান, সৌধ্যের সামনের চত্বরসহ ওয়াকওয়ে ছয় ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি উঁচু হবে। প্রয়োজন মতো স্মৃতিসৌধের সিড়িও উঁচু হবে।
এ বিষয়ে কার্যাদেশের বিস্তারিত তথ্যসহ সাইনবোর্ড প্রকল্প এলাকায় নেই। আর বিস্তারিত না থাকার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। কাজের বিস্তারিত কেন নেই—এমন প্রশ্নের জবাবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত কার্যাদেশ সম্পর্কিত বিস্তারিত উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানাতে।
এ বিষয়ে সংস্কারকাজ করা কুশলী নির্মাতা লিমিটেডের কর্মকর্ত সাহাব উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে। বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে পানি নেমে যায়, এজন্য সংস্কারকাজের সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও যুক্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। পূর্বদিকে একটি মাল্টিপারপাস ভবন প্রায় শেষের দিকে। এখনো সংস্কারকাজের তথ্য সম্পর্কিত সাইনবোর্ড নেই। কারণ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। আজকে দিয়েছে, এখন দ্রুতই সাইনবোর্ড লাগাব।
শহীদ বৃদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ইট খোলার কাজের শুরু থেকে প্রতিদিন এসে কাজ দেখেছেন স্থানীয় এক তরুণ। মোহাম্মদ রানা নামের ওই তরুণ বলেন, এটা ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। কেন এমনভাবে ভেঙে সংস্কার করা হচ্ছে? মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে এর সম্পর্ক। ৫০ বছরে এমন কী হলো, এভাবে সংস্কার করা হচ্ছে? যে ইট খোলা হচ্ছে, একই রকম ইট এখানে এনে রাখা হয়েছে সংস্কারের জন্য। এটা ভাঙলে তো এর মৌলিকত্ব হারাবে!
এ বিষয়ে মিরপুর গণপূর্ত উপ-বিভাগের প্রকৌশলী শারিয়ার সাফায়েত বলেন, প্রতিবছর বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে সিটি কর্পোরেশন এটা রং করে। রং করতে করতে উপরের অংশ ভঙুর হয়ে গেছে। এ ছাড়া মূল নকশাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না, বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আশে-পাশের ভূমির চেয়ে নিচু হয়ে গেছে। আজকের সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে আছে। নতুন করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা যোগ করা হচ্ছে। সৌধের সামনের চত্বর উঁচু হচ্ছে, যাতে বৃষ্টি হলে পানি সঙ্গে সঙ্গে ড্রেনে চলে যায়। স্মৃতিসৌধ থাকবে ঝকঝকে, মানুষের চলাফেরার উপযোগী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ