ঢাকা, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৪ মে ২০২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

শেখ হাসিনার তথ্য গোপন: দুদকের চিঠি পর্যালোচনার পর ব্যবস্থা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৮, মে ২৪, ২০২৫
শেখ হাসিনার তথ্য গোপন: দুদকের চিঠি পর্যালোচনার পর ব্যবস্থা

ঢাকা: ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাঠানো চিঠি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিষয়টি পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

শনিবার (২৪ মে) নির্বাচন কমিশনার আব্দুল রহমানেল মাছউদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের চিঠি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার মতামত চাওয়া হয়েছে। আইনগত মতামত পেলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুদক কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় সম্পদের ঘোষণায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।  

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর আওতায় হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তাই হাসিনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ করা হয়েছে।

আবদুল মোমেন আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (০২-০৯-২০০৭ তারিখ) সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বর্তমান কমিশন ওই সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাইকালে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি ওই সময়ে শেখ হাসিনার দাখিল করা আয়কর নথি ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পর্যালোচনা করেন। যেখানে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে শেখ হাসিনার নিজ নামে উত্তরাধিকার ও ক্রয়সূত্রে অর্জিত স্থাবর সম্পদ/জমির মোট পরিমাণ নয় দশমিক ৩০৮ একর এবং ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পদ/জমির মূল্য এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৪ টাকা মর্মে বর্ণনা করেন। এর বিপরীতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দুর্নীতি দমন কমিশন তার নামে সর্বমোট ২৮ দশমিক ৪১১ একর স্থাবর সম্পদের তথ্য পায়, এর মধ্যে ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পদ/জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা এবং তার নামে প্রাপ্ত সর্বমোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ১৫৪ টাকা।

অপরদিকে শেখ হাসিনার নির্বাচন কমিশনে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনায় তার নিজ নামে অর্জিত জমির পরিমাণ ছয় দশমিক ৫০ একর উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে ক্রয়কৃত জমির অর্জনকালীন অর্থমূলা এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ৪৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৪ টাকা ঘোষণা করেন। ফলে তিনি নবম জাতীয় সংসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী হলফনামায় (২৮, ৪১১ একর ৬.৫০ একর) তথা ২১.৯১১ একর জমি ও জমির ক্রয়মূল্যে (৩৩,৬৬,০১০-১,৭৫,০০০)-৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকার অসত্য তথ্য  দিয়েছেন এবং নিজের এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ব্যবহৃত গাড়ির তথ্য গোপন করে হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন।

সূত্রস্থ নথির প্রতিবেদনের আলোকে কমিশনের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, যেহেতু হলফনামায় মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার ইসির সেহেতু ওপরে বর্ণিত উদ্ঘাটিত তথ্যের ওপর প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদক থেকে নির্বাচন কমিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে যেহেতু অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অবৈধ সম্পদ বিষয়ে প্রাপ্ততথ্য ২০০৮ সালের বিধায়, বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত বিস্তারিত অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের আলোকে দুদক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইইউডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।