ঢাকা: জনবান্ধব ডিজিটালাইজড ভূমিসেবা দেওয়া ও জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ভূমিমেলা।
রোববার (২৫ মে) থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে মঙ্গলবার (২৭ মে) পর্যন্ত।
রোববার (২৫ মে) ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই ভূমিমেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভূমিমেলা উপলক্ষে ভূমি ভবনের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমিমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও বার্তায় বলেন, তিন দিনব্যাপী ভূমিমেলা আয়োজনের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। যারা এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাইকে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমাণ অনেক কম। এ কারণে এখানে জমির গুরুত্ব অনেক বেশি এবং জমি নিয়ে বিরোধও বেশি। ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য খুবই জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নাগরিকদের হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা দিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে নির্ভুল ভূমি রেকর্ড প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করে জনবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে ভূমিসেবা নেওয়ার জন্য এখন আর ভূমি অফিসে সশরীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে ভূমির খাজনা দেওয়া, নামজারি, জমাখারিজ, খতিয়ান বা পর্চা সার্টিফাইড কপি ও মৌজা ম্যাপ বা নকশা দেওয়ার কার্যক্রম চালু করেছে।
তিনি আরও বলেন, ভূমি মালিকদের কথা বিবেচনা করে ভূমিসেবার আবেদন সহজে যেন দাখিল করা যায় সেজন্য ভূমিসেবা সহায়ক নির্দেশিকা-২০২৫ এর আওতায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় ঢাকা মহানগরে পাঁচটি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে অন্য সাতটি বিভাগীয় শহরে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই সারাদেশে এই ভূমিসেবা নাগরিকসেবা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে দেওয়া হবে। এসব সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে ভূমি মালিকরা সহজেই ডিজিটালাইজড ভূমিসেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া এখন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কল সেন্টারে ফোন করে ভূমি মালিকরা পরামর্শ ও অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ টিম ভূমিসেবা সংক্রান্ত জটিল সমস্যা সমাধানের উপায় জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োজিত আছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি আশা করি, ভূমিমেলার এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হবে এবং ভূমিসেবা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়বে। ভূমিসেবায় সরকারের পদক্ষেপ ও সেবা দেওয়া সম্পর্কে দেশের সব এলাকায় মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। এজন্য এই ধরনের মেলার আয়োজন বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আপনার নিজের বা প্রতিষ্ঠানের অথবা সংস্থার মালিকানায় থাকা জমির ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। ওয়েবসাইটে লগইন করে ঘরে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের মাধ্যমে দাখিলা সংগ্রহ করে আপনারা নিজেদের ভূমি মালিকানা সুরক্ষিত করতে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভূমিসেবায় ডিজিটালাইজড পদ্ধতি মানুষের ভোগান্তি, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অবসান ঘটাতে সহায়ক হবে। সব ধরনের নাগরিক সেবাকে ক্রমান্বয়ে আরও জনবান্ধব করে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের লক্ষ্য হবে ক্রমাগত এসব দায়িত্ব সরকারের হাত থেকে নিয়ে সেবাদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ছেড়ে দেওয়া। গ্রামের স্কুল-কলেজ পাস করা ছেলে-মেয়েরা, গৃহিণীরা ঘরে বসে সারাদেশে এই সেবা দেবেন। অনেকে তাদের কৃতিত্বের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে পড়বেন। তারা সারাদেশের গ্রাহকদের সেবা নিজের গ্রাম থেকে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি তিন দিনব্যাপী ভূমিমেলা-২০২৫ এর সফলতা কামনা করছি এবং মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
এসসি/আরবি