সংবাদ প্রকাশ করে ভুয়া (ফেক) হওয়ার কারণে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে প্রথম আলো। দ্বিতীয় স্থানে দৈনিক কালবেলা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।
তাঁর গবেষণার শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি’।
এতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া (ফেক) খবর প্রকাশের প্রবণতা বেড়েছে। এই প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে মূলধারার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমেও ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি।
গণমাধ্যমগুলো সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের চেয়ে ভাইরাল হওয়ার দিকেই মনোযোগ বেশি দিচ্ছে।
এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ভাইরাল নিউজের বাণিজ্যিক ও আর্থিক মূল্য বিবেচনায় এমনটা করা হচ্ছে, বলা হয় গবেষণাপত্রে।
ভুয়া খবর প্রকাশের পর নিউজ প্রত্যাহারের তালিকায় অন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে দৈনিক যুগান্তর, ডেইলি স্টার, ঢাকা পোস্ট, বাংলা ট্রিবিউন, বিডিনিউজসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম।
মামুন অর রশীদ বলেন, ‘এটি আমার নিজস্ব গবেষণাকর্ম, গত জানুয়ারি থেকে চলতি জুন মাস নাগাদ গবেষণায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাকর্মটি জার্নালে প্রকাশের জন্য আরো তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। ’
গবেষণায় ফ্যাক্ট-চেক সাইট থেকে নেওয়া ছয় মাসের স্ক্যাপ ডেটা, মূলধারার গণমাধ্যমের ৬৯৪টি পৃথক ডেডলিংকসহ পাঁচটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দল থেকে শুরু করে প্রার্থী পর্যায়েও এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতে পারে বলে জানান তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেন, বানোয়াট ও চাঞ্চল্যকর তথ্য মানুষ বেশি পছন্দ করে, তাই অনেক গণমাধ্যম আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট তথ্য ছড়ায়।
৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি অনেকটাই বেড়েছে। যার বিপরীতে সামাজিক মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সত্যের চেয়ে ভাইরাল হওয়ার দিকেই মনোযোগ বেশি। এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হয়। ভাইরাল নিউজের বাণিজ্যিক ও আর্থিক মূল্য আছে বলে সেটা করা হচ্ছে। এই চিন্তাধারা থেকে বের হওয়া না গেলে দেশের গণমাধ্যমগুলো বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। সংকটের মধ্যে পড়বে গোটা জাতি।
মূলধারার গণমাধ্যম বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে সে জায়গাটা নেবেন কনটেন্ট মেকার বা ব্লগাররা। তাঁরা বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। এই সংকট মোকাবেলায় গণমাধ্যম মালিক ও ম্যানেজমেন্টকে ডিজিটাল ভেরিফিকেশন ও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রবন্ধের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন পিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ। সংবাদমাধ্যমে অপতথ্য মোকাবেলায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। সূচনা বক্তব্যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরের সাংবাদিকতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র নিজে মিথ্যার কারখানায় পরিণত হয়েছিল এবং সংবাদমাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ফেরিওয়ালা। ’
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ