ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

আশুরা ঘিরে শঙ্কা নেই, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে: ডিএমপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৯, জুলাই ৩, ২০২৫
আশুরা ঘিরে শঙ্কা নেই, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে: ডিএমপি

পবিত্র আশুরা ঘিরে নিরাপত্তার শঙ্কা নেই, বরং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর লালবাগে হোসেনি দালান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে। অনেকের মনের মধ্যে ক্ষোভ আছে। দুই-চারটি ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক না। কিন্তু পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। যারা এই কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।

২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, অপরাধ অপরাধই। বোমা মেরে মানুষ মারা অপরাধ। অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে যেভাবে আছে, সেভাবে হবে। এটাকে কোনো লেবাস দিয়ে কালারিং করার কোনো প্রয়োজন নেই। সেটা যে আমলেই হোক। আমরা এ বিষয়ে অবগত। আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।

এর আগে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, আগামী ৬ জুলাই পবিত্র আশুরা পালিত হবে। ২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া এবং অনেক সুন্নিও এই শোক দিবস পালন করবেন। এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র আশুরা উদযাপন করছেন বা করবেন।  

তিনি বলেন, পবিত্র আশুরাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি প্রতি বছর সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ বছরও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র আশুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হোসেনি দালান, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারি ক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

মো. সরওয়ার বলেন, শিয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করা হয়েছে। ইমামবাড়ার আশেপাশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চেকপোস্ট তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। ইমামবাড়াগুলোর আশপাশে এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে সাদা পোশাকে এবং ইউনিফর্মে পুলিশ উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন করছে।  

তাজিয়া ও শোক মিছিল সংক্রান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, যেসব সড়কে তাজিয়া বা শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে, সেসব রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন থাকবে। রাস্তার পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনগুলোতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তাজিয়া মিছিলের সামনে, পেছনে এবং মধ্যবর্তী অংশে পুলিশের স্পেশাল বা দক্ষ টিম মোতায়েন থাকবে।  

এই কর্মকর্তা আরও জানান, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসমূহ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ওয়াচ টাওয়ারও স্থাপন করা হবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে। বড় ধরনের মিছিল শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট এলাকা সুইপিং করা হবে। ফুটপাতে কোনো দোকানপাট বা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা যথা সময়ে অপসারণ করা হবে বা সরিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি জানান, ডুবুরি দল, অগ্নিনির্বাপক যান বা সরঞ্জামাদি এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম মোতায়েন থাকবে। বোমা বিশেষজ্ঞ দল এবং সিআইডির ক্রাইম সিন টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে, যেন দ্রুত রেসপন্স করতে পারে। নিষিদ্ধ সংগঠন বা অন্যান্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান আছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা অপপ্রচার বন্ধে আমাদের দক্ষ টিম সাইবার মনিটরিং করছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ এবং মিছিল আয়োজনকারী ও অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে মো. সরওয়ার বলেন, নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে তারা সহায়তা করতে পারেন। তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন কোনো প্রকার ধাতব বা দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লম, ব্যাগ, সুটকেস, ছাতা বা সন্দেহজনক প্যাকেট নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে বা মিছিলে না আসেন।  

তিনি বলেন, মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার না করেন। ভীতি সঞ্চার যেন না হয়, সেজন্য রাতে পাঞ্জা মেলানো থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকা উচিত। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা উচ্চ মাত্রায় শব্দ তৈরিকারী যন্ত্র, যেমন- মাইক বা ঢোল ইত্যাদি বাজিয়ে ঢাকাবাসীকে বেশি বিরক্ত যেন না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মিছিলে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই যেন অংশ নেন এবং মিছিল শেষে সুশৃঙ্খলভাবে যে যার গন্তব্যে চলে যান।

‌তিনি আরও বলেন, যারা মিছিলে অংশ নেবেন, তারা যেন মিছিল শুরুর আগেই অংশ নেন, কোনোভাবেই মধ্যবর্তী স্থানে যেন অংশ না নেন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে পুলিশকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানাতে হবে।

১ মহরম থেকে ১০ মহররমের মধ্যে মোট ২৫টি মিছিল হচ্ছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর মধ্যে ৩ জুলাই তিনটি, ৪ জুলাই ১১টি, ৫ জুলাই ১৭টি ও ৬ জুলাই ১৯টি মিছিল হবে। মিছিল চলার সময় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেজন্য জনগণকে মিছিলের সময় এড়িয়ে চলাচলের আহ্বান জানান তিনি।

এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ