ঢাকা: সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শত্রুতার জেরে মাদক ব্যবসায়ী রাজুকে (২৫) ‘টুন্ডাবাবু’ ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। হত্যাচেষ্টার মামলায় মো.বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবুকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, অস্ত্র প্রদর্শন করে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে শোডাউনসহ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল 'কব্জিকাটা গ্রুপ' এর অন্যতম প্রধান সহযোগী কিশোর গ্যাং লিডার মো.বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবুকে (৩১)। কিন্তু সাময়িক হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে কব্জিকাটা আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে দ্বিগুণ বেগে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে ‘টুন্ডা বাবু’।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি র্যাব-২ এর অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী ভূইয়া সোহেলও বুনিয়া সোহেল, মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিম গ্রুপের প্রধান মো. সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিম এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী 'কব্জিকাটা গ্রুপ' এর প্রধান মো.আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ারকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গতকাল (২ জুলাই) মোহম্মদপুরের গ্রেপ্তার 'কব্জিকাটা গ্রুপ' এর অন্যতম প্রধান সহযোগী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডার মো.বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবুকে নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানাধীন সিএন্ডবি বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২ ও র্যাব-৬।
তিনি বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্যামলী হাউজিং ২ নম্বর প্রজেক্টে টুন্ডা বাবুকে সামুরাই ও ছুরি হাতে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শোডাউন করতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে র্যাব-২ তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং গত ২৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব-২ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে সে গত ৫ মে জামিনে মুক্ত হয়ে আগে চেয়ে দ্বিগুণ বেগে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। মূলত কব্জিকাটা আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আরও দ্বিগুণ বেগে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে সে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবু জানায়, মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে তার এবং অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত হয়। সে কব্জিকাটা আনোয়ারের নির্দেশে মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, ও ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ১০টির অধিক মামলা রয়েছে এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে। সাধারণত দিনের বেলায় তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় কম জনসমাগমপূর্ণ স্থানে পথচারীদের জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল, ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে এবং রাত গভীর হলেই বাসা বাড়ি, ফ্লাটে ও গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয়।
খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, গত (২৯জুন) আদাবর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শত্রুতার জেরে মাদক ব্যবসায়ী রাজুকে (২৫) টুন্ডাবাবু ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০জুন আদাবর থানায় টুন্ডাবাবু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়। মামলার সূত্র ধরে, বুধবার (২ জুলাই) নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানাধীন সিএন্ডবি বাজার এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-২ ও র্যাব-৬। অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় 'কব্জিকাটা গ্রুপ' এর অন্যতম প্রধান সহযোগী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডার মো.বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবুকে। এদিকে, টুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, ও ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ১০টির অধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামি টুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মোহাম্মদপুরের সব সন্ত্রাসী গ্রুপের মূল উৎপাটন করার লক্ষে র্যাব-২ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এমএমআই/জেএইচ