ঢাকা, সোমবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ জুলাই ২০২৫, ২৫ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

জুলাইযোদ্ধা-শহীদ পরিবারকে কী সুবিধা, জানালেন উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫৬, জুলাই ২১, ২০২৫
জুলাইযোদ্ধা-শহীদ পরিবারকে কী সুবিধা, জানালেন উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। পুরনো ছবি

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ; আহতদের চিকিৎসা ব্যয় ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের একগুচ্ছ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জুলাইযোদ্ধা এবং জুলাই শহীদ পরিবারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানান, স্বৈরশাসন এবং সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান সরকারিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নামে অভিহিত হয়।

উপদেষ্টা জানান, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ এবং যাবতীয় বিষয়াদির প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন প্রদানের উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ২৮ এপ্রিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের জুলাই শহীদ এবং আহতদের জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি ৮৩৪ জন এবং ৩০ জুন আরও ১০ জন সর্বমোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

আহত হওয়ার ধরন অনুসারে জুলাইযোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৯৩ জন জুলাইযোদ্ধাকে ‘ক’ শ্রেণি, ৯০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণি, এবং ৪ ও ৫ মার্চ ১০ হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির ১ হাজার ৪৪২ জন সর্বমোট ১ হাজার ৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগির গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

অনুদান (শহীদ পরিবার)
বিধিমালা অনুযায়ী, সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের আকারে এককালীন ৩০ লাখ টাকা অনুদান দেবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৭২টি শহীদ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে (স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান/মাতা ও পিতা) উত্তরাধিকার আইন অনুসারে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র—মোট ৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২ শহীদ পরিবারের মধ্যে পারিবারিক ও ওয়ারিশগত জটিলতা নিরসন করে সঞ্চয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান।

শহীদ পরিবারের এককালীন অনুদানের অবশিষ্ট ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে দেওয়া হবে।

অনুদান (জুলাইযোদ্ধা)
বিধিমালা অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ৫ লাখ টাকা অনুদান পাবেন, যার ২ লাখ টাকা করে সর্বমোট ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ‘খ’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ৩ লাখ টাকা করে অনুদান পাবেন, যার ১ লাখ টাকা করে মোট ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ‘গ’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ১ লাখ টাকা করে অনুদান পাবেন, যার পুরো অর্থ—মোট ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ যাবৎ এককালীন অনুদান হিসেবে সরকার মোট ২০২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রদান করেছে। ‘ক’ শ্রেণির অনুদানের অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা এবং ‘খ’ শ্রেণির অনুদানের অবশিষ্ট ২ লাখ টাকা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেওয়া হবে।

মাসিক ভাতা (শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধা)
বিধিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
‘ক’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ ২০ হাজার টাকা করে, ‘খ’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ ১৫ হাজার টাকা করে, ‘গ’ শ্রেণির জুলাইযোদ্ধাগণ ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের ভাতা বাবদ সরকার প্রতি মাসে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেবে।

আহতদের চিকিৎসা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুসারে ৫ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি ৭৫ জন জুলাইযোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৪৬ জন বিদেশে চিকিৎসাধীন এবং আরও ৩২ জন চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমাণ।

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার এ যাবৎ ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকা ব্যয় করেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে শহীদ পরিবারের অনুকূলে পরিবার সঞ্চয়পত্র, আহতদের এককালীন অনুদান ও বিদেশে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪ হাজার ২১২ টাকা।

পুনর্বাসন
বিধিমালা অনুযায়ী শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের ভাতা কার্যক্রম অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

এমআইএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।