ঢাকা, বুধবার, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা, অভ্যুত্থানকালে একেকটা স্পট ছিল ‘স্টালিনগ্রাদ’

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪২, আগস্ট ৫, ২০২৫
যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা, অভ্যুত্থানকালে একেকটা স্পট ছিল ‘স্টালিনগ্রাদ’

৫ আগস্ট। ২০২৪ সালের এ দিনে বদলে যায় বাংলাদেশের ইতিহাস।

রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয় ১৬ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা শাসকদল আওয়ামী লীগ। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীরা। তবে ছাত্র-জনতার এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে ৩৬ দিনের এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে প্রথমে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই যৌক্তিক দাবি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বক্তব্য উসকে দেয় আন্দোলনকারীদের। আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনীর বলপ্রয়োগ ও দমন-পীড়ন রূপ নেয় সহিংসতায়। সংঘর্ষ-সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এতে যোগ দেয় দীর্ঘদিন অনিয়ম, দুর্নীতির যাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষও। আগ্নিয়গীরির মতো জ্বলে ওঠে সারাদেশ। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। যা পরিণতি পায় ৫ আগস্ট।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠলেও আন্দোলনের হটস্পট ছিল রাজধানী ঢাকা। নগরীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, রামপুরা, উত্তরা, পল্টন, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাড্ডা- যেন ছিল এক একটি যুদ্ধক্ষেত্র। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীর ভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্টালিনগ্রাদের মতো। আন্দোলনে প্রায় প্রতিটা দিন মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে ভারী হয়ে উঠেছিল তিলোত্তমার আকাশ। অ্যাম্বুলেন্সের হাহাকার করে ছুটে চলা ছিল রাস্তায়। হাসপাতালগুলোয় একের পর এক আসছিল রক্তস্নাত নিথর শরীর। মর্গে মর্গে বেওয়ারিশ লাশ।

১-১৪ জুলাই ছিল অহিংস আন্দোলন
কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। কিন্তু সরকার এতে কর্ণপাত না করায় ৭ জুলাই শুরু হয় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। ১১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যাওয়ার পথে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সেই বাধা উপেক্ষা করে অবস্থান নেয় শাহবাগে। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে স্মারকলিপি দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করে মিছিল নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। ওইদিন রাতে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে সম্বোধন করেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যৌক্তিক দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাতে ‌‌‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

১৫ জুলাই সূত্রপাত হয় সহিংসতার
রাষ্ট্রপ্রধানের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বক্তব্যের প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই আন্দোলনকারীদের ওপর দেশি-বিদেশি অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলন দমাতে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। যার মধ্যে ছিল নারী শিক্ষার্থীরাও। তাতেও শান্ত হয়নি আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ।

ছাত্রলীগ-যুবলীগের এই হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেদিনও ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় হতাহত হন অনেক শিক্ষার্থী। পুলিশের গুলিতে রংপুরে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঝরে আরও ৫ প্রাণ। আবু সাঈদকে সামনে থেকে পুলিশের গুলি করার করার মুহূর্ত গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।

১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করাসহ সন্ধ্যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কফিন মিছিলসহ গায়েবানা জানাজা করে আন্দোলনকারীরা। সেই গায়েবানা জানাজায়ও হামলা চালায় পুলিশ। এসব দমন-পীড়ন গোপন করতে ওইদিন রাতে ইন্টারনেট পরিসেবা সীমিত করে দেয় সরকার।

আন্দোলনে চাঙ্গা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, হটস্পট রামপুরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর আন্দোলনের প্রদীপ যখন নিভু নিভু, তখনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে। আশার সঞ্চার হয় নতুন আলোর। ১৮ জুলাই সংঘাত-সহিংসতার হটস্পট হয়ে ওঠে রামপুরা-বাড্ডা। সেদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় নামে অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষ। আন্দোলনকারীদের নাম করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিটিভি ভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনায়। গণবিক্ষোভে রূপ নেওয়া আন্দোলনকে দমাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। দুপুরের পর থেকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে নিহত হয় পথচারী, রিকশাচালকসহ অনেক শিক্ষার্থী। পরদিন ১৯ জুলাই র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিও চালানো হয় ছাত্র-জনতার ওপর।

বাড্ডা-উত্তরা রণক্ষেত্র, রাস্তায় পড়ে ছাত্রদের লাশ
রামপুরার পাশাপাশি বাড্ডা ও উত্তরায় রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি জায়গায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পড়তে থাকে লাশ। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হতে থাকে আন্দোলনকারীদের শরীর। কারও বুকে, কারও মাথায় বিদ্ধ হয় গুলি। আহতদের ভিড়ে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না হাসপাতালগুলোয়। উত্তরার আজমপুরে আন্দোলনকারীদের পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। পুলিশের পাশাপাশি সেখানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পল্টন-মোহাম্মদপুরে লাশের সারি
১৮ জুলাই মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও তিন রাস্তার মোড়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলকারীদের। যা ১৯ জুলাইও চলে। ওই দিন জুমার নামাজের পর পল্টন ও মোহাম্মদপুরে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দুই জায়গায়ই হেলিকপ্টার থেকে চালানো হয় গুলি। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত একটানা গুলির শব্দ পাওয়া যায় ওই দুই এলাকা থেকে। তবে তাতেও দমানো যায়নি আন্দোলনকারীদের। দ্রোহের আগুন নেভাতে না পেরে ওইদিন রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের পাশাপাশি কারফিউ জারি করে।

বনানীতে বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন
১৮ জুলাই বনানীর বিআরটিএ, সড়ক ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের দমাতে সেখানেও অগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর বনানী থেকে গুলি চালাতে চালাতে তেজগাঁও পর্যন্ত আসে পুলিশ বিজিবি। যেন কোনো বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে গুলি চালাচ্ছে তারা।

রণক্ষেত্র মিরপুর
আন্দোলনের মাঝামাঝি সময় থেকে মিরপুরে রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রথম ১৮ জুলাই সকালে মিরপুর ১০ গোল চত্বরে অবস্থান নেন আশপাশ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টায় পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও আওয়ামী কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পরে। পুলিশ সারাদিনই আন্দোলনকারীদের দমনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

পরে আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১০, ১১,১৩, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া দখলে রাখে। এছাড়াও মিরপুর কালশী থেকে ইসিবি ও মাটিকাটায় অবস্থান নেন তারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেলে বিক্ষুব্ধ কিছু আন্দোলনকারী মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে আগুন বক্সের উপরে থাকা ফুটওভার ব্রিজেও ছড়িয়ে যায়। এতে মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। এদিন রাত ১১ টার পর পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দখলে থাকে রাজপথ।

১৯ জুলাই জুম্মার নামাজের পর থেকে মিরপুর ১০ এলাকায় জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এদিন আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এগিয়ে এলে আবারও ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছু বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১০ ও কাজিপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতর ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। মেট্রোরলে স্টেশনের পাশেই উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে থাকা ২৯টি বড় বর্জ্য অপসারণ করার কন্টেইনার ও কম্পেক্টর পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় ১৪টি গাড়ি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বিআরটিএর ফটক।

এদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে অনেকে হতাহত হয়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে বাড়তে থাকে গুলির শব্দ। আশপাশের হাসপাতালগুলোয় একের পর এক গুলিবিদ্ধ মানুষকে নিয়ে আসতে দেয়া যায়। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ কর্মীরাও এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এদিন মিরপুরের দুই হাসপাতালেই পাওয়া যায় ১৪ জনের লাশ।

যাত্রাবাড়ী সবসময় ছিল জনতার দখলে
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে কমবেশি রাজধানীর প্রতিটি এলাকায়ই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যাত্রাবাড়ীতে, এলাকাটি যেন হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের স্টালিনগ্রাদ। আন্দোলনকারীদের এক অবিচ্ছেদ্য দুর্গ হয়ে উঠেছিল যাত্রাবাড়ী। ১৬ জুলাই প্রথম যাত্রাবাড়ীতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত হয় আন্দোলনকারীদের। মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর বাসান্দিরাও গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা। ১৮-১৯ জুলাই ও ৩-৪ আগস্টের পর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও সেখানে সংঘাত সহিংসতায় প্রাণ হারান শত শত আন্দোলনকারী। দ্রোহের আগুনে জ্বলা আন্দোলনকারীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে গ্যাসবাহী ট্রাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একটি গুলিতে সেটি বিস্ফোরিত হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারতো গোটা যাত্রাবাড়ী।

ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের পর কিছুটা স্তিমিত হয় আন্দোলন
১৮ জুলাই ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের পর আন্দোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারায় স্তিমিত হতে থাকে আন্দোলন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী তুলে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। এর মধ্যেই আসে ৯ দফা দাবি। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও জরুরি অবস্থার মধ্যেই সারাদেশে চলতে থাকে আন্দোলন।

৩ জুলাই শহীদ মিনারে গণঅভ্যুত্থানের ডাক
৩ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া সেই শহীদ মিনারে প্রতিটি ছাত্র-জনতার চোখে সেদিন জ্বলছিল দ্রোহের আগুন।

ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
এক দফা ঘোষণার পর আন্দোলন দমাতে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৪ আগস্ট সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয় আন্দোলনকারীরা। সেদিন কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সেদিনই সবচেয়ে বেশি লাশ দেখেছিল দেশবাসী।

৫ আগস্ট পতন হয় দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আওয়ামী লীগের
মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনায় সেদিন সকাল থেকেই গণভবন অভিমুখে আসতে থেকে আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় দুপুরের আগেই দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রধান ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৩৬ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি হয় ফ্যাসিস্টের পলায়নের মাধ্যমে। তবে সেদিনও রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন অনেক আন্দোলনকারী।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরুতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে বিস্ময়কর পালাবদলের সূচনা ঘটে, তার সমাপ্তি হয় ৫ আগস্ট।

এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।