ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

সামাজিক সুরক্ষা সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত রূপরেখার অঙ্গীকার

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৩৮, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
সামাজিক সুরক্ষা সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত রূপরেখার অঙ্গীকার

ঢাকা: বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বিসিএফসিসি)  শেষ হলো তিন দিনব্যাপী জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা সম্মেলন।  

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর)  সমাপনী দিনে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো প্রণয়নে একটি অগ্রগতিমূলক রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক  মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ।

তিনি সামাজিক সুরক্ষায় অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিয়ে বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কেবল ভাতা নয়, এটি ক্ষুধা ও দারিদ্রতার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার। আসুন আমরা এমন এক নতুন সামাজিক চুক্তি গড়ে তুলি, যেখানে সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে, এবং প্রত্যেক নাগরিক নিরাপদ, সম্মানিত ও স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা পাবে।

সম্মেলনের ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান।  
ঘোষণায় অন্তর্ভুক্তিমূলক, অভিযোজনযোগ্য এবং জেন্ডার-সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর জন্য সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কভারেজ বৃদ্ধি, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন শক্তিশালী করা, জলবায়ু সহনশীলতা অন্তর্ভুক্ত করা এবং সব কর্মসূচিতে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা।

সমাপনী অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ । তিনি বলেন, যখন আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে, তখন আমাদের কেউই প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ নই। ন্যায় ছাড়া প্রবৃদ্ধি কোনো প্রবৃদ্ধি নয়। আমরা আশা করি , এই সুপারিশগুলো কাজে লাগিয়ে ২০২৬-পরবর্তী জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করব। এখানকার অভিজ্ঞতা আমাদের এমন এক কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।
 
বাংলাদেশে ইউএনডিপি উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালি দয়ারত্নে  বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের সর্বশেষ এসডিজি প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অগ্রগতি হলেও প্রায় অর্ধেক বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা খুব ধীরে এগোচ্ছে, আর অনেকগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশ ২০২৬-এর দিকে এগোতে থাকায়, এই সম্মেলনের অন্তর্দৃষ্টি ও সুপারিশসমূহ আগামী প্রজন্মের সামাজিক সুরক্ষা নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নে ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। আমি আনন্দিত যে এই অগ্রাধিকার ও সম্ভাব্য উদ্যোগসমূহ ইউএনডিপি’র ‘সামাজিক সুরুক্ষার প্রতিশ্রুতির এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হায়দার, ফার্স্ট সেক্রেটারি ও হেড অব ডেভেলপমেন্ট, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ঢাকা; ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; ড. মনজুর হোসেন, সদস্য (সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন; মমতাজ আহমেদ, এনডিসি, সিনিয়র সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়; এবং মুরশিদা শারমিন, যুগ্ম সচিব, সমন্বয় শাখা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এ সম্মেলনের কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে ইউএনডিপি’র সোশ্যাল সিকিউরিটি পলিসি সাপোর্ট (এসএসপিএস) প্রোগ্রাম এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার (ডিএফএটি)। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, একাডেমিক, সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি এবং তৃণমূলের কণ্ঠস্বর একত্র হয়েছিল।
 
সম্মেলনের শেষ দিনে দুটি মূল বিষয়ে সমান্তরাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়: সামাজিক সুরক্ষায় জেন্ডার—যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন ও সহনশীলতা বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়; এবং ভয়েসেস ফ্রম দ্য গ্রাউন্ড: এনজিও পার্সপেক্টিভস অন সোশ্যাল প্রোটেকশন রিফর্ম—যেখানে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি ও কমিউনিটি পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।
 
সম্মেলন সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ন্যায্য সমাজ গঠনের জন্য কেবল শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা জালই যথেষ্ট নয়; বরং নাগরিকদের ক্ষমতায়ন, সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সবার মর্যাদা নিশ্চিত করার পথও তৈরি করতে হবে।

টিআর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।