ঢাকা, সোমবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

সেমিনারে বক্তারা

গ্যাসসংকট কাটাতে অবদান রাখতে পারে এলপিজি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৪৭, অক্টোবর ১২, ২০২৫
গ্যাসসংকট কাটাতে অবদান রাখতে পারে এলপিজি ফাইল ছবি

ধারাবাহিকভাবে কমছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন। এতে শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র, আবাসিকসহ সব খাতে গ্যাসসংকট চলছে।

এ অবস্থায় শিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট কাটাতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বড় অবদান রাখতে পারে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। এরই মধ্যে আবাসিক ছাড়াও শিল্প খাতে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে বক্তারা এসব কথা বলেন। টেকসই এলপিজি অর্থনীতি গড়ে তোলা, পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলা এবং নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা। অনুষ্ঠানে দেশের জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, গবেষক, উদ্যোক্তা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন।

কনক্লেভে এলপিজি খাতের ভবিষ্যৎ নীতিমালা প্রণয়ন, নিরাপত্তা মানদণ্ড, বাজার কাঠামো, পরিবেশগত টেকসই যোগ্যতা ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘দেশের স্বল্পমেয়াদি জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের বাজার মূল্য ১২০০ টাকার বেশি হওয়ায় শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ এর দাম এক হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত। ’

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘১২০০ টাকার এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয় ১৪০০ টাকায়। এটার দায় নিতে হবে ব্যবসায়ীদের। দায়-দায়িত্বহীন ব্যবসা তো চলতে পারে না। জ্বালানি সংকটে এলপিজি একটা বড় সমাধান হতে পারে। বড় সমস্যা হলো এলপিজির দামটা বেশি।

এটা মূলত বেসরকারি খাতে সরবরাহ হয়। এলপিজির দামটা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। জ্বালানি নিশ্চিত না করেই চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। গ্যাস খাতে অসংখ্য অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অপকর্ম করেছেন রাজনীতিবিদরা। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে গেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা। বিষয়টা আসলে অমন নয়, সবাইকে দোষারোপের কিছু নেই। বাংলাদেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা হবে, তার পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে। জ্বালানি সরবরাহ বাড়িয়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো জ্বালানি। মানুষ যত উন্নতির দিকে যাবে, জ্বালানি চাহিদা তত বাড়বে। জ্বালানি ছাড়া আজকের দুনিয়া চলতে পারে না। ’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ‘উন্নত দেশের পর্যায়ে যেতে হলে মাথাপিছু জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে এলপিজি ভূমিকা রাখতে পারে। ডলারের দর ও সৌদি আরামকোর বিক্রয় মূল্য ধরে প্রতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। মূল কথা হলো, ভোক্তা যাতে কম দামে এলপিজি পায়। আর ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, ‘এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করে বিইআরসি। সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজন নীতি সহায়তা। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কথায় কথায় লুটেরা বলে ব্যবসায়ীদের সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। এমন অবস্থায় কে আসবে ব্যবসা করতে!’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম। এতে বলা হয়, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এখন দিনে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে। আর বছরে এলপিজি মজুদ করার সক্ষমতা আছে ১৬ লাখ টন। দিনে ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা আছে এলপিজি খাতে। শিল্পে গ্যাসসংকট কাটাতে এলপিজি ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিজেলচালিত ব্রয়লার রূপান্তর করে এলপিজি দিয়ে চালালে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব। কয়লা, ডিজেল, ফার্নেস অয়েলের চেয়ে এলপিজির কার্বন নিঃসরণ কম।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার, ইউনাইটেড আইগ্যাস এলপিজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী হারুন গুরতাচ, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মার্কো অ্যান্টোনিও রড্রিগেজ ডি অলিভেইরা এবং আকিজ বশির গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।