জমি দখল ও চাঁদাবাজির মামলা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার নাম বাদ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক।
অভিযোগ উঠেছে, বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
কীভাবে একজন চিহ্নিত অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ডিবি পুলিশের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ পড়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। অভিযোগ উঠেছে, এরই মধ্যে বাচ্চু বেপরোয়া হয়ে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহলের কাছে।
ভালুকার ব্র্যাক এনজিওর নার্সারির জমি দখল ও বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে প্রাথমিক সদস্যপদসহ বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেন।
তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক।
স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করে, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাচ্চুর ভগ্নিপতি নেত্রকোণা জেলার ডিবির পরিদর্শক সাইদুলের মধ্যস্থতায় দলের হাইকমান্ডকে উপেক্ষা করে আওয়ামী ফ্যসিবাদের দোসর পুলিশ অফিসারদের ম্যানেজ করে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বাচ্চু।
বহিষ্কৃত ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজস্ব দলবল নিয়ে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভালুকায় চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি তৃণমূল কর্মীদের বলে বেড়াচ্ছেন, দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজনকে ম্যানেজ করেছেন এবং মনোনয়ন পাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, দলে যদি পুনরায় বহিষ্কৃত কর্মীকে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে সারা দেশে বিএনপির চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে জনগণের মধ্যে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে এবং চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অনিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি ভালুকা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (সিগনেটরি) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে তার উচ্ছৃখল কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপসহ নানা কারণে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সে গায়ের জোরে সবকিছু করে। আইন কানুনের তোয়াক্কা কখনও করেনি। সাধারণ মানুষের কাছে তার কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। সবাই তাকে ভয় পায়। বিশেষ করে তৃণমূল বিগত কর্মকাণ্ডে মন থেকে মুছে ফেলছে। ’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জানান, অলরেডি বাচ্চুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও কীভাবে প্রচারণা চালায় তা আমার জানা নেই। দল থেকে তাকে কোনও গ্রিন সিগনাল দেওয়া হয়নি। সারা দেশেই যারা দলীয় কর্মকাণ্ড বিরোধী কাজ করেছে তাদেরকে দল থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
ভালুকা থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, এই মামলাটি সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগ পত্র তারা জমা দিয়েছে। ফকরুদ্দিন আহাম্মদ বাচ্চুর নাম কিভাবে বাদ পড়েছে এটা আমি বলতে পারব না।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ওসি (দক্ষিণ) মহিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। কিন্তু সব সত্য না। তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছে। ইচ্ছা করলে বাদীপক্ষ নারাজি দিতে পারে।
এনডি