রাজশাহী: মহাসড়কে নসিমন-করিমন ও থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। সন্ধ্যায় এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্মঘটের কারণে বাসের সঙ্গে মালবাহী ট্রাক, পিকআপও চলাচল বন্ধ। ফলে সড়ক পথে রাজশাহীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। ট্রেন চলাচল করলেও গন্তব্যে পৌঁছার জন্য টিকিট মিলছে না। তবে ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
এদিকে, সকাল থেকে যানবাহন না পেয়ে দূর-দূরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েও পথে পথে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গন্তব্যে যেতে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন আবার কেউ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে ভিড় করছেন রাজশাহী রেলস্টেশনে।
পরিবহন ধর্মঘটের ফলে ট্রেনের যাত্রী বেড়েছে দ্বিগুণ। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট এরই মধ্যে হাওয়া গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন।
এছাড়া, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীদের জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়।
মহানগরের শিরোইলে ঢাকা বাস টার্মিনালে বাসের অপেক্ষারত রনজু আহমেদ নামে এক যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, তিনি ঢাকা যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ১০টায় কাউন্টারে পৌঁছান। তার ঢাকা যাওয়া খুবই জরুরি। তিনি ভেবেছিলেন ধর্মঘটের ডাক দিলেও সকালে তা প্রত্যাহার হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি।
রনজু আহমেদ জানান, রেলস্টেশনে গিয়েও ট্রেনের টিকিট মেলেনি। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। পরিবহন নেতাদের কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকার প্রবণতা বন্ধে আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট, ভদ্রা ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে শেফালি বেগম, নাহিদ ইসলাম ও আবদুস সালাম নামে বেশ কিছু যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে চরম দুর্ভোগের কথা জানা যায়।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। একই দাবিতে এর আগেও কয়েক দফা ধর্মঘট পালিত হয়েছে। তবে তা প্রশাসনের আশ্বাসে প্রত্যাহারও করা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বার বার তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না।
তাই এবার তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। প্রয়োজনে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন এই পরিবহন নেতা।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসন সব সময়ই আন্তরিক। এরই মধ্যে সমঝোতা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় সার্কিট হাউসে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ওই সভায় মোটর শ্রমিক নেতাদের অসার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। তারা এলে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বলেন, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য তারা সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। কিন্তু এতেও পরিবহন নেতারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এরপরও সন্ধ্যায় বৈঠকে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।
রাজশাহী জেলা বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্রা ও বিভিন্ন ত্রি-হুইলার মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করা, রুট পারমিট বহির্ভূত এলাকায় চলাচল বন্ধ করা, রুট পারিমট দেওয়া বন্ধ করা, লিজকৃত বিআরটিসি ও দ্বিতল বাস উপজেলা ভিত্তিক চলাচল বন্ধ করা, স্কেলের নামে ট্রাকে চাঁদাবাজি এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এসএস/টিআই