ঢাকা: ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু বলছে, শীত এসে গেছে। তারপরও রাজধানীতে সবজির পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ।
দেশের বড় সবজির আড়ত যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে ও বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
মেহেরপুর থেকে ছয় হাজার পিস ফুলকপি নিয়ে এসেছেন পাইকার শাহাদাত হোসেন। সোমবার (১৬ নভেম্বর) ভোরে যাত্রাবাড়ী আড়তে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করছেন তিনি ১৫ টাকায়। এরপরও তাকে নাকি ক্ষতি স্বীকার করেই বাড়ি ফিরতে হবে বলে বাংলানিউজকে জানালেন তিনি।
শাহাদাত বললেন, ছয় হাজার ফুলকপি কিনতে হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়। এরপর রয়েছে গাড়ী ভাড়া ১৭ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে শ্রমিক খরচ চার হাজার ও ঘর ভাড়া সাড়ে ছয় হাজার টাকা। সবমিলিয়ে তার মোট খরচ দাঁড়িয়েছে এক লাখ সতের হাজার পাঁচশ টাকায়।
সোমবারের বাজারে যে দরে তিনি ফুলকপি বিক্রি করছিলেন, তাতে সর্বসাকুল্যে আয় হবে ৯০ হাজার টাকা। খরচ তুলতে হলে আরও প্রয়োজন সাতাশ হাজার টাকারও বেশি।
গতকাল রোববারের (১৫ নভেম্বর) হাটেও ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন বলেও জানালেন এই ব্যবসায়ী।
একই কথা বগুড়ার মোকামতলা থেকে ফুলকপি নিয়ে আসা পাইকার ইসমাইল হোসেনেরও। তিনিও রোববার লোকসান দিয়েছেন ১২ হাজার টাকা। আর এ হাটে ক্ষতির পরিমান কোথায় দাঁড়াবে, তা বিক্রির পরই বুঝতে পারবেন বলে জানালেন তিনি।
শুধু ফুলকপি নয়, এবার মূলা চাষী ও ব্যবসায়ীদেরও কপালে ভাঁজ পড়েছে। অনেকেই পরিবহন খরচ তুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। মূলার মৌসুম চললেও এখনও তেমন দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মাস খানেক আগে যে মূলা প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) একশ থেকে দেড়শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, এখন সেই মূলা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়।
নরসিংদীর মনোহরদির চালাকচর থেকে সবজি নিয়ে আসা কৃষক ও ব্যবসায়ী ইয়াকুব জানালেন, রোববারের হাটে ১৫ মণ মূলা এনে লোকসান দিয়েছেন। সোমবারও এনেছেন ১০ মণ।
তিনি বাংলানউজকে বলেন, যে দামে জমিতে মূলা কিনেছি সে দামই তোলা এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইয়াকুবের মতো একই অবস্থা নরসিংদীর আয়নাল, রফিক ও বাচ্চুর। তারা জানালেন, মূলা এখন পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। লাভের আশা বাদ দিয়ে এখন তারা আসল টাকা ওঠানোর চেষ্টায় রয়েছেন।
ফুলকপি, মূলার মতো একই দশা লালশাক ব্যবসায়ীদেরও। তাদেরই একজন সোনারগাঁওয়ের জামপুর ইউনিয়নের মহোজমপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ। তিনি জানালেন, সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে মন্দা যাচ্ছে। যে শাক প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) একশ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি করেছেন এর আগে, এখন তার দাম নেমে গেছে মাত্র ৪০-৪৫ টাকায়।
নরসিংদীর মনোহরদি চালাকচরের কৃষক মোহাম্মদ বাবু বাংলানউজকে বলেন, এবার প্রতি হাটে শুধু লোকসান দিচ্ছি। অনেক সময় তো ট্রাকের ভাড়াই উঠছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘন্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এমআইকে/আরএইচ