ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চতুর্থ দফায় ভাঙনের মুখে যে স্কুল

ফটো ও স্টোরি: দীপু মালাকার, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
চতুর্থ দফায় ভাঙনের মুখে যে স্কুল ছবি : দীপু মালাকার /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তেওতা (মানিকগঞ্জ) ঘুরে এসে: বিদ্যালয়টি প্রথম স্থাপিত হয়েছিল ১৮৯৯ সালে। তারপর এই ১১৬ বছরে তিনবার যমুনার বুকে বিলীন হয়েছে।

প্রতিবারের দুর্যোগের পরই নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে।

সর্বশেষ ২০০৪-০৫ সালের ভাঙনে বিলীন হওয়ার পর অর্ধকিলোমিটার দূরত্বে আরও পশ্চিম পাশে সরিয়ে এনে ২০০৬-০৭ সালে তৈরি হয় নতুন করে। কিন্তু বিদ্যালয়ের নতুন সেই ভবনটিও এখন যমুনার মাত্র কয়েক হাত দূরে!

চতুর্থ দফায় যমুনার বুকে বিলীন হওয়ার এই শঙ্কায় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের গোয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে কোনো মুহূর্তে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি।

অবশ্য, স্কুলের জন্য নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন। তবে, সেটা আটকে আছে অর্থ ও ১৫ শতাংশ জমির অভাবে।
 
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দফায় ভাঙনের পর চতুর্থবারের শঙ্কায় পড়ায় ৩১৩ শিক্ষার্থীর স্কুলটির কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কেবল স্কুলটিই এ বিপদে পড়ছে না বারবার।

দেড় যুগ ধরে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে তেওতা এলাকায় নদীগর্ভে হারাচ্ছে একের পর এক স্থাপনা। এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে নদী ভাঙন আতঙ্কে। ঐতিহ্যবাহী তেওতা বাজারের প্রায় অর্ধেকাংশই বিলীন হয়ে গেছে নদীতে।

আরও প্রায় ১০০ দোকান রয়েছে ভাঙনের মুখে। কয়েকশ’ পরিবার ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিয়েছে।

যমুনার চোখ রাঙানি ও স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগের বিষয়ে গোয়ারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম মনজুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলায় ভাঙন খানিকটা রোধ করা গেলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।

এখন স্কুলটির নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। এজন্য সাবেক এমপি এবিএম আনোয়ারুল হক ২৫ শতাংশ জমি দিয়েছেন স্কুলকে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ভবন তৈরি করতে প্রয়োজন আরও ১৫ শতাংশ জমি।

সেই  জমি পেলে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। অথবা ১৫ শতাংশ জমি কেনার জন্য দুই লাখ টাকা যোগাড় করতে হবে।

এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম গালিব খান বলেন, নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য সাবেক এমপি ২৫ শতাংশ জমি দিয়েছেন বলে আমরা জানি। যমুনা যদি বর্তমান ভবনটিকে ভাসিয়ে নেয়, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্কুলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলাপ করলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন ও তার সহপাঠীরা জানায়, গোয়ারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেবল তেওতার শিক্ষার্থী নয়, আছে যমুনার চরের শিক্ষার্থীও। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না।

কেন আসে না? এ বিষয়ে স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী অনিকা সাহা জানায়, খোলা রুমে বৃষ্টির ঝাপটা আর দমকা বাতাসে শীত লেগে যায়। আর রোদ পড়লে তখন অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে দাঁড়ায়।

শিক্ষার্থীদের সুরে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক মনজুরুল হকও। তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না। স্কুলের অবকাঠামোর কারণেও অভিভাবকরা তাদের পাঠাতে চান না। এমন প্রতিকূলতায় স্কুলের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এজন্য আশানুরূপ ফলাফলও করতে পারে না শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, তিন দফায় নতুন ভবন নির্মাণ করেও স্কুলটিকে এক জায়গায় স্থায়ী রাখা যাচ্ছে না কেবলই যমুনার অব্যাহত ভাঙনের কারণে।

এক্ষেত্রে নদী শাসন এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণই হতে পারে গোয়ারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ওই এলাকাবাসীর দুঃখ দূরের একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।