পঞ্চগড়: স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে বিদ্যোৎসাহী পদে নাম আসেনি তার। সেই ক্ষোভে স্কুলের মাঠে বাঁশের কঞ্চির বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন এক অভিভাবক।
সেইসঙ্গে মূল সড়ক থেকে স্কুলের সংযোগ সড়কে তিনটি স্থানে গর্ত করে স্কুলে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতারও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ ঘটনা ঘটিয়েছেন স্কুলের জমিদাতার ছেলে নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তার সন্তান ওই স্কুলে পড়ে।
আলোচিত এ ঘটনা ঘটেছে গত ১২ নভেম্বর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার কাজীগছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলমাঠের কিছু অংশসহ স্কুলের তিন পাশে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া দেওয়া। এ বেড়া টপকে স্কুলে প্রবেশ করা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় অসম্ভব। এছাড়া সংযোগ সড়কের তিন স্থানে এমনভাবে গর্ত করা হয়েছে, যাতে কোনো যানবাহন নিয়ে স্কুলমাঠে প্রবেশ করাও অসম্ভব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে থাকার পর ২০১৩ সালে সারাদেশে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি ঘোষণার সঙ্গে এ স্কুলটিও সরকারিকরণ হয়।
স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় স্থানীয় বাসিন্দা ফজর আলী ৫০ শতক জমি দান করেন। বিনিময়ে তার বড় ছেলে জয়নাল আবেদিনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক জানান, গত ১৯ আগস্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ৩১ আগস্ট জমিদাতা ফজর আলীর ছোট ছেলে নজরুল ইসলামসহ ৫ জন অভিভাবক মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে ৩ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে অন্যরা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি গঠন শেষে সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে।
কিন্তু হঠাৎ করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা নজরুল তাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাকে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নজরুল স্কুলমাঠে বেড়া দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেন।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ডিইপিও) জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অভিভাবক নজরুল ইসলাম বংলানিউজকে জানান, স্কুলমাঠের জায়গায় তাদের পারিবারিক ৭৫ শতক জমি রয়েছে। এর থেকে তার বাবা স্কুলের জন্য ৫০ শতক জমি দিয়েছেন। বাকিটা পৈত্রিক সূত্রে তিনি পাবেন। তাই বেড়া দিয়ে তার জায়গা ঘিরে দিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তাকে ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য করার আশ্বাস দিয়ে প্রধান শিক্ষক তার মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহার করিয়েছেন। কিন্তু পরে তাকে না রেখে প্রধান শিক্ষকের পছন্দের লোককে ওই পদে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করলে বেড়া তুলে ফেলব। না হলে ওই হেডমাস্টার কিভাবে স্কুল চালায় আমি দেখব। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া থানার ওসি জুলফিকার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে এভাবে বেড়া দেওয়া অন্যায়। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৫
এসআর