ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে চার কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

১৬ নভেম্বর (সোমবার) বিজয়নগর থানা পুলিশ মামলাটি দায়ের করে।

মামলার আসামি শিক্ষকরা হলেন- স্থানীয় ইসলামপুর কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন (৩২), ইসলামের ইতিহাস বিবাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামসুদ্দিন মৃধা (৩৮), দর্শন বিভাগের প্রভাষক মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক কামাল উদ্দিন আহমেদ (৪০)।

ওই চার শিক্ষক নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

বিজয়নগর থানা সূত্রে জানা গেছে, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ [২] ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, গত ১৬ নভেম্বর দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে পশ্চিম মেরাসানী গ্রামের ডা. আলী নেওয়াজের বাড়িতে জামায়াত ও বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী গোপন বৈঠকে বসেন। এ খবর পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযানে যায়।

এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে অবস্থানরতরা ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ।

আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা পালিয়ে যাওয়া আসামিদের নাম জানান। পরে ৩২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৭ নম্বর আসামি করা হয় ওই শিক্ষকদের।

পুলিশ সুপারের কাছে করা ওই শিক্ষকদের লিখিত আবেদনে বলা হয়, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা সরকারবিরোধী কোনো কার্যকলাপে লিপ্ত নন। কোনো রাজনৈতিক দলেরও অনুসারী নন তারা।

ওই চার শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা দূরের কথা, তারা এ মামলার বাকি ২৮ আসামির কাউকেই চেনেন না। মামলায় ঘটনার যে সময় দেখানো হয়েছে ওই সময়ে কলেজ শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাসায়, শামসুদ্দিন মৃধা সরাইলে তার নিজের বাড়িতে এবং জাহাঙ্গীর আলম বিজয়নগরের পাইকপাড়া গ্রামে নিজের বাড়িতে ছিলেন।

তারা আরো জানান, কলেজে দায়িত্ব পালন শেষে তারা বরাবরের মতোই যার যার বাড়িতে ফিরে যান। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাদের কারোরই কোনো যোগাযোগ নেই।

মামলার আসামি কলেজ শিক্ষক মো. শামসুদ্দিন মৃধা বলেন, পুরো ঘটনাটিই ষড়যন্ত্রমূলক। আগে থেকেই তাকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

তিনি আরো জানান, ১৯৮৭ সালে সরাইল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল) আসনে মহাজোট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার চাচাতো ভাই।
 
তিনি অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশের কারণে তাদের কর্মস্থল ইসলামপুর কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। কিন্তু তারা চার শিক্ষক রাজনীতির এমন মামলার শিকার হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ হাফেজ শফিকুর রহমান বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানি না।   মামলা হয়েছে বলে শিক্ষকরা আমাকে জানিয়েছেন। এ নিয়ে কলেজের নীরবতার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামলা তো আর কলেজের নামে হয়নি, মামলা হয়েছে শিক্ষকদের বাড়ির ঠিকানায়।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, তারা জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তাদের বিশেষ তালিকায় এ চার শিক্ষকের নাম নেই। কি কারণে তাদের মামলায় আসামি করা হলো তা ওসিই ভালো বলতে পারবেন।

শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ওই চার শিক্ষককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
আরএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।