ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মায় পাইলিংয়ের আয়োজন

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
পদ্মায় পাইলিংয়ের আয়োজন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পদ্মা থেকে ফিরে: বিশাল ওয়ার্কশপ থেকে বের হচ্ছে পাইল। রেললাইন ধরে সেই পাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামছে পদ্মায়।

থরে থরে পাইলের উপর ভর দিয়ে গড়ে উঠবে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর উপর পাইল সাজানোর কাজ। মাওয়া ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর উপরে সাত নম্বর পিলারের কাছে প্রথম পাইলিং শুরু হবে। এজন্য সেখানে জড়ো হচ্ছে পাইলিং কাজের সরঞ্জামাদি।

পাইলগুলি নিয়ে আসার আগের দিন থেকেই পিলারের আশপাশ ঘিরে চলছিলো নানা প্রস্তুতি। স্থানটি বিকেলে পরিদর্শন করে গেছেন সেতু সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও চায়না মেজর ব্রিজের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা।

তবে মূল পাইল ড্রাইভিং শুরু হবে আগামী মাসে। এটাই পদ্মা সেতুর আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।

মঙ্গলবার দিনভর ওয়ার্কশপ ও পদ্মা সেতু নির্মাণ এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

শীতের দুপরের মিষ্টি রোদে অলসতার ছাপ নেই পদ্মাপাড়ে। চলছে রড, সিমেন্ট ও কংক্রিটের কর্মযজ্ঞ। ব্যস্ততা বেড়েছে চীনা প্রকৌশলী, সেতু কর্মকর্তা ও মহাযজ্ঞের নির্মাণ শ্রমিকদের।

মাওয়া নতুন ঘাটের পাশেই পদ্মাসেতুর ওয়ার্কশপ এলাকা থেকে স্পিড বোট যোগে ৭ নম্বর পিলার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে একটি ভারী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন রাখা হয়েছে। পাইল নিয়ে যাওয়ার আগে স্থানটির বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন চায়না মেজর ব্রিজ প্রকৌশলীরা।

এদিকে, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের জন্য ওয়ার্কশপ এলাকার ভেতরে গড়ে তোলা পাইল ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডের ভেতর সুনিপুণভাবে প্রস্তুত একের পর এক পাইল বের হচ্ছে।  

সেখান থেকে ঠিক রেললাইনের উপর চাকায় ভর করে পদ্মামুখি হয়ে ভিড়ছে তীরের দিকে। বিশাল গোলাকৃতির পাইল মূল ইয়ার্ড থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নদী তীরেও। সেখান থেকে যাবে মাঝপদ্মায়।

এ কাজে নিয়োজিত চায়না মেজর ব্রিজের প্রকৌশলীলা জানান, প্রথমে ৬টি সাপোর্ট পাইল স্থাপন করে প্লাটফর্ম তৈরি করা হবে। তারপরে পাইল ড্রাইভিংয়ের জন্য পিলারের কাছে ড্রাইভ ক্রেন স্থাপন করা হবে। শেষে পাইল বসিয়ে হ্যামার দিয়ে ড্রাইভ শুরু হবে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের ৪২টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এই সেতু। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার হবে।

সেতুর ৪২টি পিলারে ৬টি করে ২৪০টি এবং দু‘পাড়ের ১২টিতে দুটি করে ২৪টি পাইল বসাতে হবে। সর্বমোট ২৬৪টি পাইল হবে।

এ কাজে জার্মানি থেকে তৈরি করে আনা যে হ্যামারটি ব্যবহৃত হবে তার ওজন প্রায় তিন হাজার টন, দৈর্ঘ্য ১২০ ও ব্যাস ৩ মিটার।

পদ্মাপাড়ের সেতু প্রকৌশলীরা জানান, এখন থেকে পাইলিংয়ের যন্ত্রপাতি সাজানোর কাজ শুরু হলো। পাইল ড্রাইভিংয়ের পরই পদ্মাসেতুর সুপার স্ট্রাকচারের (উপরের অংশ) কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ওয়ার্কশপ পাইল ফ্রেব্রিকেশন ইয়ার্ডের পাশেই আরেকটি ইয়ার্ড তৈরি শুরু হয়েছে।

আর নদী শাসনের কাজও এগিয়ে চলছে। নদীর দুই পাড়ে কয়েক লাখ ব্লক তৈরি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত মূল সেতুর প্রায় ১৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ। দ্বিতল এই সেতুর পুরোটা হবে স্টিল আর কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর উপরের তলায় থাকবে চার লেনের মহাসড়ক আর নিচ দিয়ে যাবে রেল লাইন। রেলের গতি হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এসএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।