ফরিদপুর: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায়।
কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের পাশাপাশি মুজাহিদের মরদেহ ফরিদপুরে যেন দাফন না করা হয় সে দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী-সাক্ষীরা।
ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, ৪৪ বছর ধরে মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি মুজাহিদ ও সাকার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে সে যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমবে।
তিনি বলেন, সেদিন (১৯৭১) আমার ত্রিশ লাখ ভাইয়ের খুনের বিচার, আমার চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিচার এক মুজাহিদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় না। তবুও খুনির বিচার এই সরকারের আমলে হচ্ছে এটাই সান্ত্বনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূণ্যভূমি ফরিদপুর শহর। এই শহরে মুজাহিদের মতো কুলাঙ্গারের মাটি যেন না হয়। তার মরদেহ যেন ফরিদপুরে না আনা হয়।
মুজাহিদের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও সাক্ষী রণজিৎ কুমার নাথ ওরফে বাবু নাথ বলেন, আজও আতঙ্কে দিন কাটাই। মুজাহিদ কারাগারে। কিন্তু তার অনুসারীরা এখনও পিছনে লেগে থাকেন ক্ষতি করতে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও সেদিনের নির্মম নির্যাতনের বিচার পেয়েছি। তাই সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে এটাও দাবি করি, যত দ্রুত সম্ভব ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। সরকারের কাছে দাবি, এ বিষয়টি নিয়ে যেন কালবিলম্ব না হয়। তার মরদেহ যেন ফরিদপুরে না আনা হয়।
রণজিত কুমার নাথ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজের মতো ফরিদপুরবাসী শুধু আলী আহসান মুজাহিদেরই নয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীরও দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন মুজাহিদের মরদেহ যেন ফরিদপুরের মাটিতে না আনা হয়।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ এবং অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দেশের এই শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি বহাল থাকার সর্বশেষ চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তাদের সামনে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ক্ষমা না চাইলে বা খারিজ হলে সরকারি নির্দেশ অনুসারে যেকোনো মুহূর্তে তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
ফাঁসির পর সাকাকে তার চট্টগ্রামের রাউজানের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে মুজাহিদকে তার ফরিদপুর শহরের বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত থাকলেও মরদেহ সেখানে দাফনের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মুজাহিদের ছোট ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ মোবাইলে বাংলানিউজকে জানান, আমাদের বাড়িটি শরিকদের মাঝে এমনভাবে ভাগ হয়েছে যে, পারিবারিক কবরস্থান বলতে সেরকম কিছু নেই। মুজাহিদের স্ত্রী-সন্তানরা যদি চান, তাহলে মরদেহ ফরিদপুরে আনা হবে দাবি করে তিনি জানান, সেক্ষেত্রে শহরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হতে পারে।
ফরিদপুরের মতোই রাউজানবাসীও ঘোষণা দিয়েছেন, তারাও সাকার মরদেহ সেখানে ঢুকতে দেবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর