ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাশকতার তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
নাশকতার তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশের সাম্প্রতিক গুপ্ত হত্যার ঘটনাগুলোর চেয়েও বড় ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে। তবে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সরকারও ব্যাপক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।



শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর যে ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার চেয়ে বড় ধরণের ঘটনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

ওই সূত্রগুলোর মতে, দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ফাঁসির রায়, সর্বোচ্চ আদালতে ওই রায় বহাল রাখা এবং রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে নাশকতার বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে।

তাছাড়া আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দুই বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করেও এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য আছে। তাদের টার্গেটে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, বিমান বন্দর, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চটার্মিনালসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থল।

এই তথ্যের ভিত্তিতে সরকারও বিভিন্ন ধরণের সতর্কতামুলক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সারা দেশে এ ব্যাপারে নির্দেশ পাঠানো রয়েছে এবং সে অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে। সরকারের এই সতর্কতার অংশ হিসেবেই ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। মুজাহিদ ও সাকার রিভিউ আবেদন গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) বাতিলের পর কিছু সময় ইন্টারনেটও বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে এই সব পরিকল্পনার পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত এবং সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির জড়িত রয়েছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিককে হত্যা, ব্লগার, প্রকাশক, আশুরার সমায়েতে বোমা হামলা, পুলিশ হত্যা, গত বুধবার আবার দিনাজপুরে ইতালির আরেক নাগরিকের উপর হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা ও গুপ্ত হামলার ঘটনাগুলো এরই অংশ বলে তারা মন্তব্য করেন। সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একের পর এক এ গুপ্তহত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটনানো হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের ওই নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। দেশীয় চক্রটিকে আন্তর্জাতিক চক্র বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

গত বছর ৫ জানুয়ারি ১০ দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ৯২ দিন লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যমে পেট্রোল বোমার আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ বিভিন্ন ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটনো হয়। বিএনপি-জামায়াত ওই কর্মসূচি দেয় এবং ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ছিলো। এবারও নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি লন্ডন যাওয়ার পরপরই এই গুপ্তহত্যার ঘটনা শুরু হয়। আবার দেশে ফেরার পর কি ধরণের তৎপরতা চালাবে সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের ওই নীতিনির্ধারকরা জানান।  

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, চলতি বছরের শুরুতে নাশকতা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর জামায়াত-বিএনপি নিজেদের সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকেও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করেছে। তারা ওই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থসহ বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। ওই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নাশকতা চালানোর বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে রয়েছে।

তবে তারা যেন বড় ধরণের কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে সে ওই গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে তাকেও কড়া নজরদারিতে রাখা হবে বলেও জানায় সূত্রগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এসকে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।