খুলনা: বুধবার (২৫ নভেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পঞ্চম সমাবর্তন। সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসকে; যেন সবাই মেতে উঠতে শুরু করেছেন উৎসবের আমেজে।
সরেজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা গেছে।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করছেন খুবির আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালারও উদ্বোধন করবেন তিনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেবেন খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল পাওয়া শিক্ষার্থীরা পঞ্চম সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন।
এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তবে এরমধ্যে আড়াই হাজার স্নাতক রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তাদের সনদপত্র নিতে নিবন্ধন করেছেন।
এর মধ্যে ১৫ জনকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন আইটি (পিজিডিআইটি) ও একজনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে।
গোল্ড মেডেল পাচ্ছেন ১৪ শিক্ষার্থী:
বিভিন্ন স্কুলের (অনুষদ) অধীনে বিভাগীয় চূড়ান্ত পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফলের জন্য এবার ১৪ শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
তারা হলেন- উজ্জ্বল বিশ্বাস, রীনা পারভীন, আফরোজা পারভীন, মো. ইমরান হোসেন, জয়ন্ত বীর, শেখ মোজাম্মেল হোসেন, শারমীন আক্তার, জয়দেব গোমস্তা, মো. রুবেল হাসান বাপ্পী, জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি, মোহাইমিনুল ইসলাম, অপূর্ব রায় ও নুসরাত জাহান এবং লুৎফন্নাহার লিজা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সফলভাবে ৫ম সমাবর্তন আয়োজনের জন্য একটি স্টিয়ারিং কমিটি ও অর্গানাইজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আছে একাধিক উপ-কমিটিও।
এসব কমিটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজনে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন খেলার মাঠে মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে মাঠে বিশাল প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলেছে। এছাড়া বর্ণিল সাজে ক্যাম্পাসকে সাজানো হচ্ছে। সমাবর্তন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস যেন উৎসবে মেতে উঠতে শুরু করেছে।
১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা খুবিতে এ পর্যন্ত চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ সমাবর্তন হয় ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর।
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে আর্কিটেকচার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্ল্যানিং ও ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনে ৮০ জন শিক্ষার্থী যাত্রা করা খুবির বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী ছয় হাজারের বেশি। তাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকাসহ চারটি হল রয়েছে। মেয়েদের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি নতুন হল।
বর্তমানে পাঁচটি স্কুল ও একটি ইনস্টিটিউটের অধীনে মোট ২৬টি ডিসিপ্লিন রয়েছে খুবিতে। বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়ন করছেন ১২ বিদেশি শিক্ষার্থীও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মডার্ন ল্যাংগুয়েজ সেন্টার, গবেষণা সেল, সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দ্য সুন্দরবনস, সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলেও অধ্যয়ন ও গবেষণা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছর খুবিতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইসিটি) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
অদম্য বাংলা:
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ‘বধ্যভূমি’ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অদম্য বাংলা’।
নির্মিত হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও কটকা স্মৃতি সৌধ; যা শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠতে উদ্ধুদ্ধ করে।
সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এরইমধ্যে দেশে স্বতন্ত্র নজির সৃষ্টি করেছে।
প্রতিষ্ঠার পর গত ২৫ বছরে এই সবুজ ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, লাগেনি কোনো রক্তের দাগ।
ভবিষ্যতেও এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রেখে এগিয়ে যাবে খুবি- এটাই প্রত্যাশা করছেন খুলনা তথা দেশবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এমআরএম/এমএ